অনভ্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত হচ্ছেন মিনহাজুল

ফাইল ছবি

চেনা-পরিচিতজনরা নানা সময়ে তাঁর নামে ১২টি ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সন্ধান দিয়েছেন! মিনহাজুল আবেদীনের নিজেরও যে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই, তা নয়। কিন্তু সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাচক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে সক্রিয় রাখার একটি সীমানা নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন, “ইনস্টাগ্রামে আমার একটি অ্যাকাউন্ট আছে। ওখানে কিছু ছবিটবি পোস্ট করি। আর ফেসবুক অ্যাকাউন্টও আছে একটি।

তবে সেটি বহুকাল হয় ‘ডি-অ্যাক্টিভেট’ করে রেখেছি।”

নির্বাচক-পরবর্তী জীবনে নিষ্ক্রিয় সেই অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করার সম্ভাবনা আছে। কারণ সেটি বন্ধ রাখার প্রধান কারণই ছিল সমালোচনার উত্তপ্ত হাওয়া থেকে গা বাঁচিয়ে চলা, ‘ইনস্টাগ্রামে তো কিছু লেখাটেখা যায় না। ফেসবুকে যায়।

আমাদের (নির্বাচকদের) নিয়ে বাজে কথাবার্তা সব ওখানেই বেশি লেখা হয়ে এসেছে।’ 

২০১১ সালে বিসিবির সিনিয়র নির্বাচক কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়কের পদোন্নতি হয় আরো পাঁচ বছর পর। ২০১৬ সালে প্রধান নির্বাচকের পদে বসার পর থেকেই মূলত সমালোচনার সুচালো কাঁটার সঙ্গে পরিচয় মিনহাজুলের। এর আঘাত এড়িয়ে চলার জন্য তাঁর নিজস্ব এই পদ্ধতি কাজেও দিয়েছিল খুব, ‘ওটাকে (সমালোচনা) আমি পাত্তা দিইনি কখনো।

তা ছাড়া নিজেকে শান্ত রাখতে পারতাম, কারণ আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকতামই না।’

ওভাবে বেছে বেছে চলার জীবনের সমাপ্তি হয়েছে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে অভ্যস্ততা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, সেটিতে ছেদ পড়েছে। দায়িত্ব ছাড়ার পর তাই কিছুটা সমস্যাও হচ্ছে মিনহাজুলের, ‘প্রথম কয়েকটি দিন তো থমকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল আমার। এত দিন কাজ করার পর সেটি আর করছি না।

এ জন্য ভীষণ অস্থিরও লাগছিল।’

অবশ্য এই অস্থিরতা কয়েক দিনেরই। নতুন করে আবার ব্যস্ত হয়ে ওঠার অপেক্ষায় মিনহাজুল। নির্বাচক হিসেবে না রাখলেও তাঁর জন্য নতুন দায়িত্ব বের করেছে বিসিবি। সংস্থাটির হেড অব প্রগ্রাম ডেভিড ম্যুরসের অধীনে মিনহাজুলের পদ চিফ কো-অর্ডিনেটর, বিসিবি প্রগ্রাম। আগের কাজের তুলনায় যেটিকে একদম আলাদাই মনে হচ্ছে তাঁর, ‘নতুন করে আরেকটি কাজ শুরু করব। এবারের কাজটি ভিন্ন ধরনের। আগের কাজটি ছিল মাঠে খেলা দেখার এবং (ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স) বিশ্লেষণ করার। এখন আলাদা কাজ। পেপার ওয়ার্ক বেশি।’ 

অন্য ধরনের কাজে যুক্ত হতে গিয়ে ফেলে আসা রোজকার জীবনের কথাও কম মনে পড়ছে না মিনহাজুলের, “পার্থক্য তো অনেক। তখন (নির্বাচক হিসেবে) সব সময় ব্যস্ততা ছিল। পরদিন কী কাজ করব, তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত আগের দিনই। কোথায় কোন দল খেলছে—জাতীয় দল, ‘এ’ দল ও হাইপারফরম্যান্স, সব দলের কথাই মাথায় রাখতে হতো। আলোচনা হতো। ছকে বাঁধা একটি জীবনই ছিল। সেই জীবন থেকে বেরিয়ে আসার পর একটু অস্থিরতা তো কাজ করবেই। কিন্তু এটিই জীবন। মেনে নিতেই হবে।”

পেছন ফিরে তাকিয়ে নিজের কাজ সততার সঙ্গে করে আসার তৃপ্তিও অনুভব করেন মিনহাজুল, ‘খেলার সময় তো আরো বেশি অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তাম। দর্শকদের গালাগাল এদিক-সেদিক থেকে চলতেই থাকত। কিছু কিছু মানুষের সমালোচনা চলবেই। এটিই স্বাভাবিক। দিনের শেষে কাজ কী করেছি, আমি কাজটি সততার সঙ্গে করেছি কি না, শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করেছি কি না—এগুলোই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ এই সন্তুষ্টির সঙ্গে তীব্র এক বেদনাও মিনহাজুল অনুভব করেন এই ভেবে যে ভালো কাজের প্রশংসা জোটেনি কখনো, ‘প্রশংসা তো আমরা কখনোই কোনো জায়গা থেকে পাইনি। কারো কাছ থেকেই নয়। ইংল্যান্ডের মতো দলকে টেস্টে হারানো, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওদের মাটিতে গিয়ে প্রথমবার টেস্ট জেতা—কই, কেউ তো কখনোই এসে আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে যায়নি। অন্তত ব্যক্তিগতভাবে কারো কোনো অভিনন্দন আমি কোনো দিন পাইনি।’

নিত্য সমালোচিত মিনহাজুলের নতুন দায়িত্বের শুরুতে সঙ্গী হচ্ছে প্রশংসিত না হওয়ার এই বেদনাও!

LEAVE A REPLY