ফারজানা চুমকি।
দীর্ঘদিন ধরেই বিজ্ঞাপন, টিভি ও মঞ্চ নাটকে নিয়মিত কাজ করছেন অভিনেত্রী ফারজানা চুমকি। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার নতুন একটি চলচ্চিত্র। নানা মাধ্যমে সফলভাবে পথচলা এই অভিনেত্রী নিজের কাজ ও ইন্ডাস্ট্রির সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে কথা বললেন ইত্তেফাকের সঙ্গে।
বর্তমান কাজের ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই—
কিছুদিন আগে ৪টি ধারাবাহিকের কাজ শুরু করেছিলাম। এর মাঝে ২টি আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে ‘স্মৃতির আলপনা আঁকি’ এবং ‘গুলশান অ্যাভিনিউ সিজন টু’ নাটক দুটি প্রচার হচ্ছে। পাশাপাশি সম্প্রতি ‘একটি লৌকিক ও অলৌকিক স্টিমার’ নামের একটি মঞ্চ নাটকে কাজ করলাম। এছাড়া আমার একটি চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

সংকটের ভেতর দিয়ে চলা মঞ্চের সার্বিক পরিস্থিতি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দেখুন, মঞ্চের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, এটা বলার অবকাশ রাখে না। এখন ছেলেমেয়েরা মঞ্চে সময় দিতে চায় না। কারণ টিভিতে নাটকে অভিনয় করলে দ্রুত পরিচিতির পাশাপাশি টাকা পাচ্ছে। কিন্তু মঞ্চে তো সেই পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।
ক্যারিয়ারের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ শিল্পী অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। এটা কী সুযোগের অভাবে?
অনিয়মিত হয়ে পড়ে, এটা ভুল। সবাই কাজ করতে চায়। কিন্তু আমাদের বয়স অনুযায়ী মায়ের চরিত্র করতে পারি না, আবার নায়িকার চরিত্রও করতে পারি পারি না। আমাদের সঙ্গে যায় এমন কাজ খুব কমই পাওয়া যায়। তাছাড়া ইন্ডাস্ট্রিতে সিনিয়রদের নিয়ে ভাবার মানুষ কমই আছে।

এখন ভিউ গুনে নাটকের মান ও স্টার নির্ধারণের চর্চাকে কীভাবে দেখছেন?
অনেকেই ইউটিউব ভিউ দেখে বলছেন নাটকের ভিউ। এই বিষয়টি আমার বোধগম্য হয় না। কারণ আমাদের সময় নাটক দেখে যখন মানুষ প্রশংসা করতো তখন বুঝতাম কাজটি ভালো হয়েছে। সময়ের পরিবর্তনে ভিউ হয়তো ভালো, না হলে তো এটাকে মূল্যায়ন করা হতো না।
কিন্তু অনেক মানহীন কাজেরও তো ভিউ হচ্ছে—
এটা দর্শকদের কারণে হচ্ছে। আমরা জেনে-বুঝে কেন খারাপ কাজটি দেখবো। এই একটু দেখি থেকেই তাদের ভিউ হচ্ছে। ছাদের ওপর লাফলাফি করেই যদি স্টার হওয়া যায়, তবে আমরা কষ্ট করে অভিনয় কেন করব!

কাজ না জানা অনেকেই নির্মাণ ও অভিনয় করছেন। এতে নাটক সৃজনশীলতা হারাচ্ছে না?
অবশ্যই সৃজনশীলতা হারাচ্ছে। আগে নির্মাতা ডিরেকশন দিতেন, আমরা সেভাবেই অভিনয় করতাম। কিন্তু এখন অনেক নির্মাতাই শিল্পী নির্ভর হয়ে পড়েছেন।
ভাঁড়ামো দিয়ে নাটককে শুধু বিনোদন মাধ্যমে পরিণত করা হচ্ছে। এতে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি কি-না?
নিশ্চয়ই দূরে সরে যাচ্ছি। ভালো কাজ করলে দর্শক অবশ্যই দেখবে। কিন্তু জোর করে ভাঁড়ামোটা এত বেশি হচ্ছে, যেটা খুবই দুঃখজনক। একটি নাটকে বিনোদনের পাশাপাশি সামাজিক বার্তাও দেওয়ার দায়বদ্ধতাও থাকে। বলছি না, ভালো কাজ হচ্ছে না। এখন বেশি কাজ হওয়ায় ভালো কাজগুলো চোখে পড়ছে না। যদিও সংখ্যায় তুলনামূলক কম হচ্ছে।

নাটকের মাধ্যমে ভাষাকেও বিকৃত করা হচ্ছে। এতে মানুষের কাছে আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছাচ্ছে না?
দেখুন, আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে নাটক নির্মাণ করা যেতেই পারে। তবে আমাদের শুদ্ধ ভাষাকে নষ্ট করা ঠিক হচ্ছে না। ভাষা বিকৃত করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হবে, বিষয়টি এমন না। আমরা তো শুদ্ধ ভাষা দিয়েই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছি।
ওটিটি নিয়ে অল্পদিনেই সিন্ডিকেটের কথা শোনা যাচ্ছে। এতে আপনাদের সুযোগ কেমন দেখছেন?
এটা আসলে এজেন্সি বা চ্যানেল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করছে। কারণ তারা আগেই ঠিক করে দিচ্ছে কাকে নিতে হবে। নির্মাতা বাধ্য হয়ে তাদের নিয়েই কাজ করছেন। টিভি-ওটিটি একই নিয়মে চলছে। তারপরও নতুন অনেকে সুযোগ পাচ্ছেন এবং ভালো কাজ করছেন।
ইত্তেফাক/জেডএইচডি