মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় নওশাদ

পাইলট নওশাদ আতাউল কাইয়ুমের লাশ দেশে ফিরলে তার কফিনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী, বিমানের এমডি ও বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়—

বিমানবন্দরে সহকর্মীদের অপেক্ষা! শেষ পর্যন্ত পাইলট নওশাদ আতাউল কাইয়ুম দেশে এলেন, কিন্তু কফিনে বন্দি লাশ হয়ে। বিমান থেকে কফিন নামানোর পরই সহকর্মী অনেকেই অঝোরে কেঁদে ফেললেন। কেউ নীরবে চোখের পানি ফেলেছেন। বহু যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে চিরতরে নিজেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মাঝ আকাশে ‘হার্ট অ্যাটাকের’ পর ভারতের নাগপুরে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান এ বৈমানিক। তার মরদেহ গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে।

বিমানবন্দরে সহকর্মীরা ফুলেল শ্রদ্ধায় শেষ বিদায় জানান ক্যাপ্টেন নওশাদকে। এই সময় বিমান বন্দরে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। নওশাদের মরদেহ শাহজালাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় বনানীতে তার বাড়িতে। সেখানে প্রথম জানাজা শেষে বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনে মরদেহ আনা হয়। বলাকা ভবনে সহকর্মীরা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে দাফন করা হয় ঢাকার বনানীতে। মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি। তার কফিনে ফুল দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীও।

শতাধিক যাত্রীকে বাঁচানো ক্যাপ্টেন নওশাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের জনসংযোগ শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, বুধবার রাতে বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইট দোহা গিয়েছিল। সেটা ফেরার পথে নাগপুর হয়ে ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুমের মরদেহ নিয়ে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ঢাকা পৌঁছায়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইয়ুম ৩০ আগস্ট ভারতের নাগপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান। তিন দিন এই হাসপাতালে তাকে লাইফ সপোর্টে রাখা হয়েছিল। এর আগে ২৭ আগস্ট ওমানের মাস্কাট থেকে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা ফেরার পথে মধ্য আকাশে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সিভিয়ার হার্ট অ্যাটাক হয় তার। তিনি তাত্ক্ষণিকভাবে বিজি ০২২ ফ্লাইটটির নিয়ন্ত্রণ কো পাইলট ফার্স্ট অফিসার মোস্তাকিমকে বুঝিয়ে দেন। অনুরোধ করেন ফ্লাইটটি দ্রুত জরুরিভাবে অনুমতি নিয়ে কোথায়ও অবতরণ করানোর জন্য। বিমানটি ছিল তখন ভারতের আকাশে। নাগপুর বিমানবন্দরে অনুমতি মেলে অবতরণের। বিমানটি সঠিকভাবে অবতরণের কারণে ১২৪ জন যাত্রীর জীবন রক্ষা পায়।

এর আগেও বিমানের একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের চাকা ফেটে যায় আকাশে উড়ার সময়। সেই ফ্লাইটটিকে নিরাপদে অবতরণ করিয়ে ১৫০ জন যাত্রীর জীবন রক্ষা করেছিলেন নওশাদ। কিন্তু মানুষের জীবন বাঁচানো পাইলট শেষ পর্যন্ত নিজেই পরাজিত হলেন।

ইত্তেফাক/কেকে

LEAVE A REPLY