ভুট্টা খাওয়ার উপকারিতা

ভুট্টার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন আছে। যদিও এগুলি প্রথম শ্রেণির প্রোটিন নয়। অর্থাৎ মাছ, মাংসে যে পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, সেটা এতে নেই। তবে ভাতের চেয়ে ভুট্টায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি।

এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডের মধ্যে লাইসিন আর ট্রিপটোফ্যান আছে। আর আছে বিটা ক্যারোটিন, অর্থাত্‍ ভিটামিন এ। এ ছাড়া থায়ামিন, অর্থাত্‍ ভিটামিন বি-ও এতে পাওয়া যায়। ভুট্টায় ভিটামিন সি আছে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভুট্টায় ভিটামিন সি-র পাশাপাশি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টও আছে। ফলে, রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় গুণ এই ফসলে অনেকটাই বেশি। এ ছাড়াও ভুট্টায় ফাইবার থাকে অনেকটাই।

One Young Indian Woman Busy Eating Sweet Corn Outdoor Horizontal Stock  Photo - Download Image Now - iStock

চোখের উপকারে

ভুট্টায় ক্যারোটিনয়েড লুটিন এবং জেক্সানথিনের মতো প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি অপটিক টিস্যু থেকে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যালস দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। পাশাপাশি চোখের সূক্ষ্ম অংশগুলিকেও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। গ্লুকোমা এবং ছানির মতো সমস্যা থেকেও রক্ষা করে।

রক্তাল্পতা দূর করতে

যাদের রক্তে হিমগ্লোবিনের মাত্রা কম তাদের জন্য এটি ওষুধের মতো কাজ করে। তাই রক্তাল্পতার চিকিৎসায় ভুট্টা খুবই সহায়ক।

হার্টের সুরক্ষায়

ভুট্টায় কোলেস্টেরলের এবং সোডিয়াম খাকে না। এতে থাকা ফাইবার ও ভিটামিন B3 থাকে সেটি ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। ভুট্টার আটায় তৈরি রুটি হার্টের রোগীদের জন্য খুবই উপকারি।

বার্ধক্য রোধ করতে

ভুট্টা খেলে শরীরে কোলাজেন তৈরি হয়, যার কারণে ত্বক নরম ও মসৃণ হয়ে ওঠে। পাশাপাশি ভুট্টার বীজে থাকা ভুফেনোলিক অ্যাসিড এবং ফ্লেভোনয়েড, এই দুই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিক্যালসের সমস্যা দূর। ত্বকের নতুন কোষ তৈরির পাশাপাশি বলি রেখা মেটায়।

পেটের সমস্যা দূর করতে

এতে থাকা ফাইবার পেটে ব্যাথা, পেট ফাঁপা সহ পেটের বেশকিছু সমস্যা দূর করে। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল কার্যকারিতাকে আরও উন্নত করে।

কিডনির সমস্যায়

ভুট্টা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ও কিডনির সমস্যাযর ক্ষেত্রেও উপকারি। মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পরিমাণ বুঝে ভুট্টা খাওয়া উচিত। তবে যুবকরা প্রতিদিনই ভুট্টা খেতে পারেন।

স্নায়ুতন্ত্রের উন্নতিতে

69,070 Bowl Of Corn Stock Photos, Pictures & Royalty-Free Images - iStock

ভুট্টা স্নায়ুতন্ত্রকে ভালভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, মানসিক চাপ কমাতে এবং অনিদ্রাজনিত রোগ দূর করতে সক্ষম এই ভুট্টা।

হাড় মজবুত করতে

ভুট্টায় প্রাকৃতিক ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় মজবুত করে। এটি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করে।

গর্ভাবস্থায়

গর্ভাবস্থায় খাদ্য হিসেবে ভুট্টা গ্রহণকে খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। কারণ ভুট্টায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রণ, এবং ফলিক অ্যাসিড সহ ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি ইত্যাদি। আর এইসব পৌষ্টিক উপাদান গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী। একইসাথে গর্ভস্থ শিশুর জন্য ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। এগুলি শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ড গঠনের ক্ষেত্রে যাবতীয় ত্রুটির সম্ভবনা খর্ব করে দেয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় মধুমেহ আক্রান্ত মহিলাদের জন্যও চিকিৎসকেরা খাদ্য হিসেবে ভুট্টা গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

ভুট্টার একাধিক স্বাস্থ্য গুণ থাকলেও অনেক সময় ভুট্টা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ও হয়ে ওঠে। ভুট্টায় থাকা উচ্চ মাত্রার ফাইবার পেটে ব্যথার জন্ম দেয়। শুধু পেটের যন্ত্রনাই নয়, একইসাথে পেট ফাঁপা, পেট খারাপ এর মতন একাধিক পেট সংক্রান্ত সমস্যা সৃষ্টি হয়।ভুট্টার মধ্যস্থিত গ্লুটেন আবার অনেক মানুষের ত্বকে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে।কিছু ক্ষেত্রে আবার অধিক ভুট্টা গ্রহণ শরীরে পেলেগ্রা, ডায়রিয়া, চর্মরোগ এর মতো শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

ভুট্টার একটি রেসিপি

Indian Grilled Spiced Corn (Street Style Bhutta Masala Corn) | Olive & Mango

নতুন কিছু খেতে মন চাইছে? আবার হাতে সময়ও কম। তাহলে বানাতেই পারেন তন্দুরি ভুট্টা। খেতেও ভালো, আবার স্বাস্থ্যকরও বটে।

উপকরণ: টক দই, লাল লঙ্কাগুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, গরম মশলা, কসুরি মেথি, আদা-রসুনবাটা, লবন(আন্দাজমতো), সরষের তেল, চাট মশলা, ভুট্টা।

প্রণালী: একটি বড় বাটিতে ফেটানো টক দই, লাল লঙ্কাগুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, গরম মশলা গুঁড়ো, কসুরী মেথি, আদা-রসুন বাটা, আন্দাজমতো লবন, সরষের তেল ও চাট মশলা দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটিতে ভুট্টা দিন। ভুট্টার গায়ে ওই মিশ্রণটিকে ভালমতো মাখিয়ে ওভেন বা তন্দুরে ভুট্টাটিকে বেক করুন ভালভাবে। পুদিনার চাটনি-সহ পরিবেশন করুন গরম গরম তন্দুরি ভুট্টা।

ইত্তেফাক/এফএস

LEAVE A REPLY