২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ছিনতাইকারীরা এদিন পূর্ব আমেরিকার আকাশপথ দিয়ে ওড়া চারটি যাত্রীবাহী বিমান একসঙ্গে ছিনতাই করে। লক্ষ্য ছিল এগুলোর মাধ্যমে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে গোটাবিশ্বকে জানিয়ে দেওয়া তাদের অস্তিত্ব ও শক্তিমত্তা সম্পর্কে। যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ। সন্ত্রাসীরা প্রথমেই নিউ ইয়র্কের দুটি আকাশচুম্বী ভবনে দুটি বিমানের বিস্ফোরণ ঘটায়। যা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নামে পরিচিত। শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বই এই ভয়াবহ হামলায় আঁতকে উঠে। কী করে এতো নিষ্ঠুরতম হামলার মাধ্যমে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া যায়। আজও দিনটির কথা স্মরণ করলে মানুষ ভয়ে শিউরে উঠে।
সেদিন সকাল ৮.৪৬ মিনিটে টুইন টাওয়ারে ছিনতাইকৃত বিমানের প্রখম বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। দ্বিতীয় বিমানটির বিস্ফোরণ ঘটে সকাল ৯টা ৩ মিনিটে। দুটি ভবনেই তখন আগুনে মানুষ মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। কিন্তু খুব বেশি সময় তারা পাননি। কেউ কেউ সঙ্গে সঙ্গে, কেউ কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ চলে যায়। তৃতীয় বিমানটি পেন্টাগনের সদর দপ্তরের পশ্চিম অংশে সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে আঘাত হানে। এরপর সকাল ১০টা ৩ মিনিটে চতুর্থ বিমানটি আছড়ে পড়ে পেনসেলভেনিয়ার একটি মাঠে।

বিমানের যাত্রীরা তখন ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এসব হামলায় মোট ২ হাজার ৯৭৭ জন মারা যায়। তারমধ্যে শুধু টুইন টাওয়ারের ভবনে আগুনে পুড়ে মারা যায় ২ হাজার ৬০৬ জন। এ সব হামলায় মোট ১৯ জন দুর্ধর্ষ হামলাকারী ছিল। তারা চারটি দলে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক দলে এক জন ছিনতাইকারীর বিমান চালনায় প্রশিক্ষণ ছিল। যারা যুক্তরাষ্ট্রে বসেই বিমানের প্রশিক্ষণ নেন। উগ্র মতাদর্শের ইসলামপন্থি সংগঠন আল-কায়েদার বিরুদ্ধে এই হামলার পরিকল্পনার অভিযোগ উঠে। ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠীটিকেই দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্ররা।
এ ঘটনার এক মাসেরও কম সময় পর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আফগানিস্তান আক্রমণের ঘোষণা দেন। উদ্দেশ্য টুইন টাওয়ারে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে আফগানিস্তান থেকে আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর পরই সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেকড় গেড়ে বসেন এবং আল-কায়েদার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে। যুদ্ধ শুরুর এক দশক পর আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ থেকে গ্রেফতার ও পরবর্তী সময় হত্যা করা হয়। এর আগে অবশ্য ২০০৩ সালে এই হামলার পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি কিউবার কুখ্যাত গুয়ান্তোনামো বে কারাগারে বন্দি আছেন। এখনো তিনি বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এর পরের কথা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। ২০ বছর পর আফগানিস্তানে যুদ্ধের পাট চুকিয়ে গত মাসে তল্পিতল্পাসহ নিজ দেশে চলে যায় মার্কিন সৈন্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এত যুদ্ধের দামামা, এত প্রাণহানি, এত রক্তারক্তির পর শেষ সময়ে কেন রণে ভঙ্গ দিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে কি তালেবানের হাতে রেখে দিয়ে ফের আল-কায়েদার পথ সুগম করা হচ্ছে? কেননা টুইন টাওয়ারে হামলার পর তালেবানের কাছেই আশ্রয় নেন ওসামা বিন লাদেন। আর তখন তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তালেবান নেতা মোল্লা ওমর।
অন্যদিকে গত বছরে কাতারের দোহায় তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে তাহলে কি সেটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানের একটা কৌশলও ছিল? যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, যুদ্ধে আর কোনো অর্থ অপচয় নয়, এবার নিজেদের ঘর সামলানোর পালা। বিষয়টি যদি তেমনই হয়, ৯/১১ এর হামলার ২০ বছর পর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কতটা প্রাপ্তি যুক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রের খতিয়ানে?
ইত্তেফাক/এএইচপি