বাংলাদেশ-মেক্সিকো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে সম্মত

বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও মেক্সিকো। সম্প্রতি মেক্সিকোর স্বাধীনতার ২০০ বছর উদযাপন উপলক্ষে সে দেশ সফরকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং মেক্সিকোর বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক উপমন্ত্রী লুজ মারিয়া ডি লা মোরা স্যানচেজের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সম্মতি প্রকাশ করা হয়। 

 মেক্সিকোর উপমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দুদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।  উভয় দেশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ,কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রগুলোতে নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারবে বলে মেক্সিকোর উপমন্ত্রী উল্লেখ করেন। মেক্সিকোর উপমন্ত্রী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে মেক্সিকো সিটিতে বাণিজ্যবিষয়ক সেমিনার ও প্রদর্শনী আয়োজনের প্রস্তাব করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে বলে তার সম্মতি প্রকাশ করেন। এসময় রোহিঙ্গা ইস্যুতে বহুপাক্ষিক বিভিন্ন প্লাটফর্মে বাংলাদেশের পক্ষে অব্যাহতভাবে সমর্থন প্রদানের জন্য মেক্সিকো সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। 

এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই এবং মেক্সিকোর শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন সিওএমসিই’র মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে লুজ মারিয়া ডি লা মোরা স্যানচেজ। তিনি উল্লেখ করেন, এ সমঝোতা স্মারক উভয় দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই দু’দেশের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। উভয় দেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় বাংলাদেশ-মেক্সিকো চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

মেক্সিকো সফরকালে সে দেশের ইবেরো-আমেরিকান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন যা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সরাসরি সম্প্রচার করে। ইউনিভার্সিটির টরেয়োন, টিজুয়ানা ও সান্টা ফি ক্যাম্পাসের ২ হাজার সাত শতাধিক শিক্ষার্থী এ অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।  এসময় তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘এসডিজি প্রগ্রেস অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির বিষয় উল্লেখ করে বলেন, দারিদ্র দূরীকরণ, ধরিত্রী সুরক্ষা এবং সকলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের গৃহীত কার্যকর পদক্ষেপের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। 

শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য ইবেরো-আমেরিকান ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে তার বক্তৃতার জন্য ইউনিভার্সিটির পক্ষ হতে ‘সার্টিফিকেট অভ রিকগনিশন’প্রদান করা হয়। এসময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর মেক্সিকোর শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ভ্রমণ, বিশেষ করে বাংলাদেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান যেমন; বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ হতে একটি সামরিক কন্টিনজেন্ট এবং সাংস্কৃতিক দলসহ এই উদযাপনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা আনন্দিত। একইসাথে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বিজয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে মেক্সিকোর সামরিক প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আমাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। 

শাহরিয়ার আলম তার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে গত এক দশকে বাংলাদেশ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের বিস্ময়কর সমৃদ্ধি অর্জনের নানা দিক তুলে ধরে বলেন, দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বর্তমান বাংলাদেশকে একটি ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

LEAVE A REPLY