দেশে যখন একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে, দেশের অনেক উপজেলায় এখন সিনেমা হল নেই। এমনকী জেলা শহরেও সিনেমা হল নেই। আরো আশ্চর্যের বিষয় রাজশাহীর মতো বিভাগীয় শহরেও কোনো সিনেমা হল নেই। সাদাকালো যুগ পরবর্তী নব্বই দশকে দেশে হলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৩৫টির মতো। বর্তমানে সিনেমা হল কমতে কমতে গোটা দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ৯৫টি তে দাঁড়িয়েছে! যার মধ্যে সিনেমা প্রদর্শনের যোগ্য ৬৫ টি হলে- এমনটাই কালের কণ্ঠকে ব্জানিয়েছেন প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু। আর ২৫টি জেলায় এখন আর কোনও সিনেমা হল নেই।
সিনেমা হল নিয়ে যখন দুঃসংবাদের শেষ নেই, তখন আশা জাগানিয়া সংবাদ নিয়ে এলো স্টার সিনেপ্লেক্স। সারাদেশে ক্রমান্বয়ে সিনেমা হল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্স। করোনা মহামারীর প্রভাবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এই সংকটময় সময়ে যা দোদীপ্যমান প্রদীপ। এতদিন ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার ঢাকার বাইরে সিনেপ্লেক্স এর শাখা চালু করতে যাচ্ছে। প্রথমেই বগুড়ায় নতুন শাখা চালু করতে যাচ্ছে তারা।
বগুড়া ছাড়াও ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, রাজশাহী ও সৈয়দপুরে নির্মিত হতে যাচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স। কুমিল্লা জেলা ও রাজশাহী বিভাগীয় শহরে থাকছে স্টার সিনেপ্লেক্স। অন্যদিকে আরেকটু উত্তরে রংপুর ও দিনাজপুরকে সমন্বয় করে নীলফামারীর উপজেলা শহর সৈয়দপুরে স্টার সিনেপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুরুতে বগুড়ায় চালু হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষের বিনোদনের জন্যও আরেক ধরনের সিনেমা হল চেইন চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে স্টার সিনেপ্লেক্সের। যার টিকেট ক্রয় ক্ষমতা থাকবে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই।
অন্যদিকে, সিনেমাখাতে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা এক হাজার কোটি টাকা দিচ্ছেন। যেটা দিয়ে অনেকেই বেসরকারি উদ্যোগে সিনেপ্লেক্স বানাবে বলে মনে করছেন খসরু। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এক হাজার কোটি টাকা দিচ্ছেন, যেটা কোনো ব্যাংক লোন নয়, তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই এই টাকা নিয়ে সিনেপ্লেক্স বানাবে। আমি নিজেও একটি সিনেপ্লেক্স বানাবো ইতোমধ্যে জমি কিনে ফেলেছি। ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা হবে আমার সিনেপ্লেক্স।’
বগুড়া শহরের সাতমাথা মোড় নওয়াব বাড়ি রোডে অবস্থিত পুলিশ প্লাজায় নির্মিত হবে স্টার সিনেপ্লেক্সের মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল। ঢাকার বাইরে এটিই তাদের প্রথম শাখা। রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে স্টার সিনেপ্লেক্স এবং বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট-এর সঙ্গে এ বিষয়ক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন স্টার সিনেপ্লেক্স-এর চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল এবং বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (কল্যাণ ট্রাস্ট) মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী।
আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে মাল্টিপ্লেক্সটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান স্টার সিনেপ্লেক্স-এর চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল। দু’টি হল থাকবে এখানে। মোট আসন সংখ্যা ৪২৫। বরাবরের মত নান্দনিক পরিবেশ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্বলিত সাউন্ড সিস্টেম, জায়ান্ট স্ক্রিনসহ বিশ্বমানের সিনেমা হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হলগুলো নির্মিত হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকার বাইরের দর্শকরা বিশ্বমানের সিনেমা হলে ছবি উপভোগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাই দেশব্যাপী অনেকগুলো সিনেমা হল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা আগেই বলা হয়েছিলো। সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ এটি। দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রসারে এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে বলে জানান মাহবুব রহমান।
তথ্যমন্ত্রণালয়ের ৬৮ টি সিনেপ্লেক্স
তথ্যমন্ত্রণালয়ের তরফ থেকেও ৬৮ টি অত্যাধুনিক মানের সিনেপ্লেক্স তৈরি হচ্ছে। যেসবে থাকবে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা। খোরশেদ আলম খসরু বলেন, তথ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের ৬৪ টি জেলায় তৈরি হবে তথ্যকেন্দ্র। যেখানে একটি করে অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। যেটার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। এক্ষেত্রে সারাদেশে সিনেমা প্রদর্শনের জন্য নতুন আঙ্গিকে সিনেমা হল পাবে দর্শকেরা। সবগুলো জেলাছাড়াও ৪ টি অতিরিক্ত অর্থাৎ ৬৮ টি সিনেপ্লেক্স হচ্ছে।
এদিকে ঢাকার উত্তরা ও পূর্বাচলে স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখা চালুর প্রক্রিয়া রয়েছে। গুলশান ১ এর পুলিশ প্লাজাতে স্টার সিনেপ্লেক্স করা যায় কি না এ বিষয়েও চিন্তাভবনা চলছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (কল্যাণ ট্রাস্ট) মোঃ ফেরদৌস আলী চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা তো আর সিনেমা হল চালু করতে পারি না, তবে স্টার সিনেপ্লেক্স যদি এগিয়ে আসে তাহলে সারাদেশের পুলিশ দপ্তর বা পুলিশ প্লাজাতে সিনেমা হল চালু করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের ছবি স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রদশিত হবে কতভাগ?
এ বিষয়ে স্টার সিনেপ্লেক্স-এর চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেলকে প্রশজন করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যে মানের ছবি নির্মাণ হচ্ছে তার অধিকাংশই সিনেপ্লেক্সে প্রদর্শন যোগ্য নয়। এর কারণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি, সাউন্ড কোয়ালিটি, কালার রেজুলেশন। ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড না মেনে ছবি নির্মাণ করা। ভালো গল্পের, ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে ছবি নির্মাণ করা হলে সেসব প্রদর্শিত হবে।
দেশীয় প্রযোজনাতে স্টার সিনেপ্লেক্স এগিয়ে আসবে বলে জানান রুহেল।

বগুড়ায় স্টার সিনেপ্লেক্সের শাখা চালু নিয়ে চুক্তিসাক্ষর
২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’। বর্তমানে ঢাকায় ৪ টি শাখা রয়েছে এর। ধানমন্ডির সীমান্ত সম্ভার (সাবেক রাইফেলস স্কয়ার), মহাখালীর এসকেএস (সেনা কল্যাণ সংস্থা) টাওয়ার।
সম্প্রতি মিরপুর ১ নম্বর সনি স্কয়ারে চালু হয় আরেকটি শাখা।
হলিউডের ছবির পাশাপাশি সুস্থধারার দেশীয় ছবিও নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। যার ফলে সিনেমাপ্রেমীদের প্রিয় নাম হয়ে উঠেছে ‘স্টার সিনেপ্লেক্স।