হঠাৎ করেই দাম বাড়ছে পেঁয়াজের। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে মানভেদে ৭ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) গতকাল তাদের প্রতিবেদনে দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে। শুধু পেঁয়াজই নয়, দাম বাড়ার তালিকায় আরও রয়েছে ভোজ্য তেল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম, আদা, হলুদ ও রসুন। এদিকে হঠাৎ করে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। আর ভারতেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। গতকাল রবিবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬৫ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। যা গত সপ্তাহে ছিল যথাক্রমে ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম ৩২ দশমিক ১৮ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে।
দেশে দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয়। এই বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকের প্রতিনিধি রাশেদুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ভারতে বন্যা ও গরমের কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, তিন-চার দিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য ছিল মানভেদে ৩০ থেকে ৩২ টাকা। কিন্তু গতকাল আমদানি করা পেঁয়াজের দাম পড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দর বেঁধে দিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ভোজ্য তেলের বাজার। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সয়াবিন তেল ও পাম অয়েলের দাম আরও বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৬৮০ থেকে ৭২০ টাকা ও এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ৫ টাকা বেড়ে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দর দেশের ইতিহাসে খুচরায় সয়াবিনের সর্বোচ্চ দাম। এর আগে ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকায় উঠেছিল।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই সময়ে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ৪৬০ থেকে ৫১০ টাকার মধ্যে। এক লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৯০ থেকে ৯৩ টাকায়। আর প্রতি লিটার সুপার পাম অয়েলের দাম ছিল ৮৪ থেকে ৯০ টাকা। আর গতকাল বাজারে প্রতি লিটার সুপার পাম অয়েল ১২৮ থেকে ১৩৫ টাকায় ও খোলা সয়াবিন তেল ১৩০ থেকে ১৩৬ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি লিটার সুপার পাম অয়েলের দাম ১১৬ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম সর্বোচ্চ ১২৯ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে উত্পাদিত সরিষা, সূর্যমুখীসহ অন্যান্য তেলবীজ থেকে সোয়া দুই লাখ টন তেল পাওয়া যায়। বাকিটা আমদানি করতে হয়। মালয়েশিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে এই তেল আমদানি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর সবচেয়ে বড় ভোজ্য তেলের বাজার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী মো. আলী ভুট্টো ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের বাজার গত এক বছর ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। দাম প্রতিনিয়ত ওঠানামা করছে। তাই দেশের বাজারও অস্থির। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে শ্রমিক সংকটে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় গত জুন-জুলাই মৌসুমে পাম অয়েল উত্পাদন আশানুরূপ হয়নি। সামনে ফেব্রুয়ারিতে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনায় মৌসুম শুরু হবে। তাই এর আগে সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম কমার সম্ভাবনা দেখছি না।
গতকাল বাজারে একদিনে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। অথচ আগের দিন শনিবার দাম ছিল ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। আর ফার্মের লাল ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়। টিসিবির হিসেবে গত এক বছরের ব্যবধানে পণ্য দুটির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৪৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
বেড়েছে আদা, হলুদ ও রসুনের দামও। গতকাল বাজারে আমদানিকৃত আদা প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ৯০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হয়। আর কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে আমদানিকৃত রসুন ১০০ থেকে ১৩০ টাকা ও দেশি রসুন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া হলুদের কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশি হলুদ ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হয়। আর আমদানিকৃত হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়।