ম্যাচটা জিতলে ফাইনাল প্রায় নিশ্চিত হয়ে যেত বাংলাদেশের। কিন্তু গতকাল মালদ্বীপের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে অস্কার ব্রুজোনের দল। ছবি : বাফুফে অ-অঅ+
মালদ্বীপে তৃতীয় ম্যাচে এসে হারের তেতো স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ২-০ গোলের হার মেনে নিতে হয়েছে অস্কার ব্রুজোনের দলকে। এই ম্যাচ জিতে ফাইনালের পথটা সহজ করে ফেলার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ঘরের মাঠের তুমুল সমর্থন নিয়ে আলী আশফাকরাই ম্যাচটা বের করে নিয়েছেন।
প্রথমার্ধে স্কোরলাইন ০-০। ম্যাচ তখনো কোনদিকে ঝুঁকে বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাটাকিং থার্ডে আশফাক, আলি ফাসির, হামজা মোহাম্মদদের মসৃণ পাসিং-শৈলী পার্থক্য গড়ে দেয়। হামজার দুর্দান্ত এক ব্যাকভলিতে ম্যাচে এগিয়ে যাওয়া মালদ্বীপ ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় আশফাকের পেনাল্টি থেকে।
kalerkanthoবাংলাদেশ শুরু থেকেই প্রেসিংয়ে গিয়েছে, যাচ্ছিল পাল্টা আক্রমণে। ডিফেন্স লাইন ওপরে তুলে প্রতিপক্ষের অর্ধে খেলার লড়াই ছিল দুই দলেরই। স্বাগতিক সমর্থকদের ড্রামের আওয়াজ আর গগনবিদারি চিৎকারের মাঝে স্নায়ুর পরীক্ষাও ছিল খেলোয়াড়দের। আশফাক একবার বক্সের কাছে বল পেয়েও পায়ে রাখতে পারেননি, উইঙ্গার হামজা কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েন সাদ উদ্দিনের। ওদিকে বিপলু মালদ্বীপের পোস্টে শট নেওয়ার সুযোগ পেলেও তাতে জোর ছিল না। আরেকটি আক্রমণে মতিনের বক্সের মধ্যে ওয়ান-টু টা পূর্ণতা পায়নি। খেলার সব কিছু এত দ্রুত ঘটছিল যে টাচলাইনে দুই কোচও একরকম দর্শক বনেছিলেন অন্তত প্রথম মিনিট পনেরো। সমর্থকরা নানা তালে ড্রাম বাজিয়ে ম্যাচটাকে আরো জীবন্ত করে রাখছিলেন। ২২ মিনিটে প্রথম কর্নার পায় বাংলাদেশ। তাতে ইব্রাহিমের শট অবশ্য পোস্ট উঁচিয়ে গেছে। ২৩ মিনিটে মালদ্বীপের মিডফিল্ডার আসাদ আলী ব্যথা পেয়ে উঠে যান, তাঁর জায়গায় নামেন ইব্রাহিম আইসাম। এর পরপরই বাঁ প্রান্তে ইব্রাহিম মাহমুদির গায়ে পা চালিয়ে কার্ড দেখেন
ইয়াসিন। ডান প্রান্তে আরো বড় বিপদ হতে পারত, আলি আশফাকের স্কয়ার পাসে হুসাইন নিহান শটটা পোস্টে রাখতে পারলে।
বাংলাদেশও এরপর পাল্টা আক্রমণে উঠেছে, তবে মতিন বল নিয়ে একা হয়ে পড়েন, বক্সের মুখে কাউকে দেওয়ার সুযোগ পাননি। ম্যাচটাতে লড়াইয়ের শক্তি কে কতটুকু ধরে রাখতে পারেন শেষ পর্যন্ত তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছিল। ৩৬ মিনিটে মালদ্বীপের ফাসির দারুণ একটি ক্রস করেও বক্সে পাননি কাউকে। ম্যাচ বিরতির দিকে গড়াতে থাকলে বাংলাদেশের বক্সের আশপাশে মালদিভিয়ানদের চাপ অবশ্য বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ অ্যাটাকিং থার্ডে তাতে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ৪২ মিনিটে ম্যাচ উত্তপ্ত হয়। হামজা মোহাম্মদ বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢোকার মুখে বিপলু আহমেদ পা বাড়িয়েছিলেন, হামজা পড়ে গেলে রেফারি বাজিয়েছেন ডাইভিংয়ের বাঁশি, মালদ্বীপের দাবি ছিল পেনাল্টি। শেষ পর্যন্ত হামজা হলুদ কার্ড দেখেন। এর পরপরই বাঁ দিকে আবার তারিক ফাউল করলে ফ্রিকিক পায় মালদ্বীপ। তা থেকে আশফাকের নেওয়া দুর্দান্ত একটা শট তেমনি দুর্দান্তভাবে ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন আনিসুর। গোলশূন্য স্কোরলাইনেই তাই প্রথমার্ধ শেষ হয়।
বিরতির পর রাইট উইংয়ের খেলোয়াড় বদলায় মালদ্বীপ, নাইজ হাসান নামেন মাহমুদির জায়গায়। একই রকম আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে তারা শুরু করে। মিনিট কয়েক যেতেই ফাসির আরেকবার পরীক্ষা নেন আনিসুরের। এবারও তাঁর দূরপাল্লার শটটি আত্মবিশ্বাসে ফেরান বাংলাদেশের গোলরক্ষক। দলের মতো মালদ্বীপের দর্শকও তখন গোলের জন্য অধীর হয়ে উঠেছিল। আরেকটা কর্নার হতেই গোলের জন্য তারা গলা ফাটান। সেই গগনবিদারি আওয়াজের মধ্যেই হামজার চোখ ধাঁধানো এক ব্যাকভলিতে সেই গোলটাই পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। কর্নারের পর ডি বক্সের ওপর থেকে হুসাইন নিহামের হেড ছিল হামজাকে লক্ষ্য করে। হামজা মুহূর্তের মধ্যে লাফিয়ে উঠে ওভারহেড কিক নিয়েছেন, বল আনিসুরের একটু সামনে ড্রপ পড়ে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে পৌঁছে। বাংলাদেশ গোলরক্ষক তার নাগাল পাননি। পিছিয়ে পড়ে এরপর ম্যাচে ফেরার লড়াইয়ে নামতে হয় অস্কার ব্রুজোনের দলকে। বাংলাদেশ কোচ এরপর ওপরে তিনজন নতুন খেলোয়াড় মাহবুবুর রহমান, জুয়েল রানা ও সুমন রেজাকে নামান। কিন্তু ওদিকে কাউন্টার অ্যাটাকে বড় বিপদ হয়ে যায়। বক্সে ঢুকে পড়া নাইজ হাসানকে পেছন থেকে থামাতে চেষ্টা করছিলেন সোহেল, নাইজ পড়ে গেল রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি, তা থেকে আশফাক ব্যবধান বাড়িয়ে ফেলেন। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ।