খুঁড়িয়ে হাঁটার ছবিতে কোনো আশা প্রতিফলিত হয় না সাধারণত। আবার কুঁজো হয়ে থাকার মধ্যেও আশঙ্কার ওড়াউড়ি দেখা যাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। ছয় বছর আগে-পরের দুটি ছবি যেন একই। একজনকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে কেউই আশাবাদী হতে পারেননি। আরেকজনের কুঁজো হয়ে থাকার খবরেও আছে শঙ্কিত হওয়ার উপাদান, যখন একই সময়ে দলও বাজেভাবে হারের ধাক্কায় বিচলিত।
অতীত আর বর্তমান এভাবেই এসে মিশেছে এক মোহনায়। প্রস্তুতি ম্যাচে হারার পর চোট আঘাতগ্রস্ত একজনের খুঁড়িয়ে হাঁটাকেই বিশ্ব আসরে সম্ভাব্য দলীয় ব্যর্থতার প্রতীকী ছবি বলে ধরা হয়েছে ছয় বছর আগে। পরেরজনও চোটে পড়ে ভুগছেন কিছুদিন ধরেই। সমস্যাটাও তাঁর এমন জায়গায় যে মাঝেমধ্যে কিছুটা কুঁজো হয়েও স্বস্তি খুঁজে নিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। যা আরেকটি বিশ্ব আসরেও সম্ভাব্য দলীয় দুর্যোগের আশঙ্কার সঙ্গে বেশ মানিয়ে যাওয়ার মতো ফ্রেমই।
দুবারই যে দুর্যোগের ঘণ্টা বাজিয়ে দেওয়া দলের নাম আয়ারল্যান্ড। প্রথমবার ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেও সেই আইরিশরাই। দুবারই বিশ্বকাপের অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় তাঁদের। ছয় বছর আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটা মানুষটা মাশরাফি বিন মর্তুজা। চোট-আঘাত তাঁর নিত্য লেগেই থাকত। তবু বাংলাদেশ অধিনায়ক সেবার খেলতে পেরেছিলেন। এবার পিঠের চোটে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক খেলেননি দুটি অফিশিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচের একটিও। সতর্কতার অংশ হিসেবেই বিশ্রামে থাকা অধিনায়ক আয়ারল্যান্ডের কাছে হারে শেষ হতে দেখেছেন নিজ দলের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি।
এ পর্যন্ত ২০১৫ আর ২০২১-র মধ্যে কোনো পার্থক্যই নেই। হার দিয়েই শেষ দুই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি। এতটুকু মেলার পর বাকিটুকুও মিলবে তো? অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ছয় বছর আগের ওয়ানডে বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স সেই কৌতূহল বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্টই। কারণ আইরিশদের কাছে হারে প্রস্তুতি শেষ করার পর ‘গেল গেল’ রব উঠে গেলেও বিশ্বকাপের মাঠে ঘটেছিল উল্টো ঘটনাই। সেটিই নিজেদের ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ বাংলাদেশের। প্রস্তুতি ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারের লজ্জায় ডোবা বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে প্রথমবারের মতো উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে।
প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়া পারফরম্যান্সে নিজেদের ইতিহাসের সেরা সাফল্য বের করা দলই কিনা প্রস্তুতি ম্যাচে আইরিশদের সামনে ছিল অসহায়। সিডনির ব্ল্যাকটাউন ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস পার্কে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ খেলতে পারেনি পুরো ওভারও। ৪৮.২ ওভারে অল আউট হয়েছিল মাত্র ১৮৯ রানে। দলের হয়ে ফিফটিও ছিল না কারো। যে রান তাড়ায় ১৭ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটে জিতেছিল আয়ারল্যান্ড। আট ওভার বোলিং করে মাত্র ১৩ রান খরচায় কোনো উইকেট না পাওয়া মাশরাফিকে ওই ম্যাচের পর খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে যেন হতাশার ছবিই আগাম দেখা যাচ্ছিল।
এবারও আবার সেই আয়ারল্যান্ড। আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়াম লাগোয়া নার্সারি মাঠে আইরিশদের ১৭৭ রানের জবাবে বাংলাদেশের হার ৩৩ রানের। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ বিবেচনায় যা বেশ বড় ব্যবধানের হারই। এই ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের পেসারদের সামলাতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের। দেশের মাটিতে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ধীরগতির স্পিন সহায়ক উইকেটে সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাসেও যেন চোট লাগাল এই হার। আগামীকাল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে যা বাংলাদেশকে আগাম সতর্কসংকেতও দিয়ে রাখল।
যে সংকেত ২০১৫-র ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগেও পাওয়া গিয়েছিল। তা থেকে খুলেছিল আরো বড় পাওয়ার পথও। এবারও কি খুলবে? অন্তত বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত মিলে গেছে সব কিছুই। ছয় বছর আগে-পরের বিশ্বকাপ-পূর্ব ছবিটা একই। এবার পরবর্তী ছবিটা মেলে কি না, তা দেখার অপেক্ষা!