মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ সোমবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ রাত থেকে সাগর ও নদীতে নামতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলেরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনার জেলার তালতলী ও আমতলী, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর, কুয়াকাটা, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালীর সাগর পাড়ের জেলেরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
জেলেরা জানায়, তারা ২২ দিন ধরে মাছ শিকারে নামতে পারেননি। সংসারে অভাব-অনটন প্রকট আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই জেলেরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ, কেউবা এনজিও, সমিতি ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। ট্রলার, নৌকা ও জাল মেরামত কাজ সম্পন্ন করে রাত থেকেই সাগরে নামতে তারা সব আয়োজন সমাপ্ত করেছে।
মা ইলিশের প্রজনন নিরাপদ করার জন্য গত ৩ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে ইলিশ নিধনে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছিল। প্রতিবছরের মতো এবারও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ নিধন এবং বাধা দিতে গেলে প্রশাসনের ওপর হামলাসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাজমুস সালেহীন জানান, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভাগের ৬ জেলায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় শনিবার পর্যন্ত ৬৭৫ জনকে জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং ১৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। ৮ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন ইলিশ এবং ৫৭ দশমিক ৬৯ লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়। এবার গত ২০ দিনে অভিযান হয়েছে ২ হাজার ৬০৪টি ও ৮৯০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়।
জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সিকদার জানান, এ বছর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে বরিশালের মেঘনায় বেপরোয়াভাবে ইলিশ নিধন করা হয়েছে। অভিযান চালাতে গিয়ে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং হিজলায় কোস্টগার্ডের জাহাজের ওপর হামলাসহ একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: সংগৃহীত
প্রকৃত জেলেরা জানান, প্রভাবশালী মাছঘাট মালিক জনপ্রতিধিদের ভাড়াটিয়া মৌসুমি জেলেরা ইলিশ নিধন করে এবং তাদের ইন্ধনে প্রশাসনের ওপর হামলা চালনোর ধৃষ্টতা দেখায় মৌসুমি জেলেরা। পেশাদার জেলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে মৎস্য অধিদফতর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তার এড়িয়ে চলেন বলে অভিযোগ করেন প্রবীণ এ মৎস্যজীবী নেতার।
নিষেধাজ্ঞার সময় অভিযান পরিচালনাকারী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে জানান, অভিযানের সময়সীমা কিছুদিন বৃদ্ধি থাকলে যেসব মা ইলিশ এখনো ডিম ছাড়তে পারেনি তার অধিকাংশই ডিম ছাড়তো। কেননা শেষ দিনে অভিযানে জব্দ মা ইলিশের পেটভর্তি ডিম দেখা গেছে।
অভিযানে অংশ নেওয়া এসব সদস্যরা জানান, মা ইলিশ কিংবা জাটকা রক্ষার অভিযান প্রায়ই মাঝ নদীতে থমকে দাঁড়ায়। আধুনিক নৌযান ব্যবস্থা না থাকায় ট্রলার নিয়ে জেলেদের কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই জেলেরা জাল ও ট্রলার নিয়ে তীরে উঠে যেতে সক্ষম হয়।
তাদের মতে ভাষানচর, বাগরজা, লেঙ্গুটিয়া পয়েন্ট, দড়ির চর, খাজুরিয়া, মাসকাটা নদী, তেতুলিয়া, মেঘনা, কীর্তনখোলার বেলতলা, চরবাড়িয়া, চরমোনাই পয়েন্ট, দপদপিয়া কালিজিরা পয়েন্টে প্রচুর ইলিশ ডিম ছাড়তে আসে। এসব নদীতে সার্বক্ষণিক নজরদারি হলে ইলিশ উৎপাদন আরও বেড়ে যেত।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, মা ইলিশ রক্ষায় বরিশাল বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’র নেতৃত্বে যৌথ টিম কাজ করেছে। সবাই একযোগে কাজ করায় এবার অভিযানে ব্যাপক সফলতাও এসেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় জেলেরা অতর্কিত হামলা চালানোর ফলে অনেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হামলার শিকার হয়েছেন।
তাই আগামীতে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় যৌথ অভিযান পরিচালনার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।