মডেল, উপস্থাপিকা ও অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিত এলিনা শাম্মী। শুধু তাই না নাটক লেখায়ও রয়েছে সমান বিচরণ। দেশ টিভিতে ‘দূরপাঠ’ নামে একটি লাইভ শো দিয়ে তার মিডিয়ায় যাত্রা। এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেছেন দেশের প্রায় প্রতিটি চ্যানেলেই। এখন নিয়মিত অভিনয় করেছেন নাটক ও চলচ্চিত্রে।
এ বছরের শুরুতে বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি ‘জানোয়ার’ ওয়েবফিল্ম মুক্তি পেয়েছে। বর্তমানে সিনেমা ও ওয়েবফিল্মে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। অভিনয়সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে ইত্তেফাক অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।
এই বছরের শুরুতে আপনার একটি ওয়েব সিরিজ প্রশংসা কুড়িয়েছে। এখন কী কী কাজ করছেন?
এলিনা শাম্মী: সরকারি অনুদানের ছবি ‘মুখোশ’-এর ডাবিং শেষ করলাম। ‘জলরং’ ছবিতে প্রথম লট কাজ শুরু করলাম। মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’র কাজও শুরু করেছি। রাসেল মিয়ার ‘ভাইয়া রে’ সিনেমার ডাবিং শেষ। বন্ধন বিশ্বাসের ‘ছায়াবৃক্ষ’-এর কাজ শেষ হয়েছে। সামিউর রহমানের ওয়েবফিল্ম জি ফাইভের ব্যানারে ‘কুহেলিকার’ শুট করছি। আলি জুলফিকার জাহেদির ‘কাগজ’ও সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের ‘হিমুর বসন্ত’ এক লট করে কাজ বাকি আছে। আই থিয়েটারে ব্যানারে ‘ভাইরাল’ ওয়েব-ফিল্মের কাজ করলাম। গত দুই মাস হলো এগুলোয় যুক্ত হয়ে কাজ করছি। আরও কিছু কাজের স্ক্রিপ্ট এসে জমা হয়েছে। দেখে-শুনে কাজের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।
ভালো ইমেজের অভিনেতাদের সঙ্গে কাজের মধ্যে আপনি কোনো সমালোচিত টিকটকার-ইউটিউবারদের সঙ্গে কাজ করছেন?
এলিনা শাম্মী: ‘ভাইরাল’ ওয়েবফিল্মে অপুসহ অনেকেই কাজ করছেন। বিশেষ করে মেয়েরা। এটা আসলে খারাপ কিছু না। অনন্য মামুন ভাই কিন্তু ৬০-৭০ জনকে গ্রুমিং করিয়েছেন। সেখান থেকে ৪-৫ জনকে বাছাই করা হয়েছে। তাদের টিচার হিসেবে কাজ করছি। আমার কথা হলো, একটা ছেলে যখন টিকটকসহ অন্য সামাজিক মাধ্যমে কাজ করছে, তখন তারা ভালোকিছু তো করছেই না বরং নেগেটিভ একটা বিষয় ছড়াচ্ছে। সেই ছেলেটা যদি ভালোকিছু করতে চায়, তাহলে তার সঙ্গে কাজ করতে আমার সমস্যা কী? এখানে তো দোষের কিছু নেই।
আপনি তো শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতা ছেড়ে অভিনয়ে এসে কতটা সফল হয়েছেন বলে মনে করেন?
এলিনা শাম্মী: আমি তিন বছর একটি ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষকতা করেছি। সেখানেও সফল ছিলাম। কারণ, ওখানে তিন জন করে সেরা শিক্ষকের সম্মাননা দেওয়া হতো। আমি প্রত্যেক বছরেই সেই সেরা তিন শিক্ষকের মধ্যে ছিলাম। সেটার জন্য আমি ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে কয়েকটি প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছি। ওই পেশা ছেড়ে দিয়ে অভিনয়ে এসেছি। মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। এছাড়া মিডিয়ায় যে দুর্নাম, সেই দুর্নাম দূরে ঠেলে কাজ করছি। এজন্য অনেকেই সুনাম করে। মিডিয়া জগতে আজকের দিনে এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। বাকি সফলতার বিষয়টি দর্শকরা বিচার করবেন।
উপস্থাপনা-নাট্যকার হিসেবেও আপনার পরিচিতি আছে। এরই মধ্যে আপনার ৪২টি নাটক টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে। অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক লেখার ইচ্ছে কবে থেকে হলো?
এলিনা শাম্মী: আমি মিডিয়ায় এসেছি উপস্থাপনা দিয়ে। এরপর নাট্যকার হিসেবে পথচলা। তানভীর হোসেন প্রবলের হাউসে কাজ করতাম। প্রবল দা যখন অ-এর গল্প শুরু করেন তখন আমি এবং তপু খান তার সঙ্গে কাজ করতাম। তখন তিনি আমাদের স্ক্রিপ্ট লেখা শেখালেন। এরপর থেকে কাজ শুরু। ‘অ’-এর গল্পের প্রথম ২২-২৩টি স্ক্রিপ্ট আমার লেখা। এটি অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। সেই আত্মবিশ্বাস নাটক লেখা শুরু করি।
নাটক, সিনেমা ও ওয়েবফিল্ম-এই তিনটি জায়গা ভিন্ন। আপনি তো এই তিন জাগাতেই কাজ করছেন। ভিন্ন ভিন্ন তিন জায়গায় মানিয়ে নিতে আপনার অসুবিধা হয়?
এলিনা শাম্মী: অভিনয় তো অভিনয়ই। সেটা হোক নাটক, চলচ্চিত্র কিংবা ওয়েবফিল্ম। আমি আসলে পার্থক্য করি না। তবে হ্যাঁ, নাটকে কাজ অনেক তারাহুরো থাকে। এখানে ডিরেক্টররাও অসহায়। চলচ্চিত্র-ওয়েবফিল্মে একটু হলেও বেশি সময় পাওয়া যায়। আমি একজন নাট্যকারও। সেজন্য নাটকের ভাষাও কিছুটা বুঝি। এর আগে অনেক কাজ করেছি কিন্তু রায়হান রাফির ‘জানোয়ার’ ওয়েবফিল্ম আমাকে দর্শকদের মাঝে পৌঁছে দিয়েছে। আমি রায়হান রাফিসহ তার টিমের প্রতি সব সময় কৃতজ্ঞ। সব কিছু মিলিয়ে নিজেকে তৈরি করার চেষ্টা করি। সেজন্য খুব বেশি অসুবিধা হয় না।
‘জানোয়ার’ ওয়েবফিল্ম আপনি মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর বোন ছাড়াও বেশকিছু চরিত্রে আপনাকে দেখা গেছে। নিজের জন্য কোন চরিত্রটা আপনি পারফেক্ট মনে করেন?
এলিনা শাম্মী: আমি যতগুলো নাটক বা ওয়েবফিল্মে কাজ করেছি সবগুলোতেই আমাকে ব্যতিক্রমী ও চ্যালেনঞ্জিং চরিত্রে অভিনয় করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে একটার একটা আলাদা। কখনো উঠতি নায়িকা, কখনো নারী পাচারকারী আবার কখনো দুর্দান্ত ভিলেন। এছাড়া ‘টুঙ্গিপাড়ার দুঃসাহসী খোকা’ সিনেমায় বঙ্গবন্ধু চাচির চরিত্রে অভিনয় করছি। যিনি আদর সোহাগ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে আগলে রাখতে। সত্যি কথা বলতে-নায়িকা বলে কখনোই নিজেকে পরিচয় দিতে চাই না। অভিনেত্রী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতে চাই। যেমন ফজলুর রহমান বাবু ভাই।