ধর্মীয় উগ্রবাদ, সামরিক বাহিনীর প্রভাব, ঋণের বোঝায় আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা দুর্বল অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক চাপসহ ভয়াবহ সংকটে পড়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বিষাক্ত তীরের মতো একে একে ধেঁয়ে আসা সংকটে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা তার কাছে নির্ঘুম রাত হয়ে ধরা দিচ্ছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বসার আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিলো পাকিস্তানের। দেশটির বেহাল দশায় জর্জরিত সেই অর্থনীতি সময়ের সাথে সাথে আরও তলানিতে ঠেকেছে- বেড়েছে ঋণের বোঝা। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ ও বিদেশি শক্তির সাথে বৈরি সম্পর্ক চরম সংকটে ফেলছে ইমরান খানকে।
এ অবস্থায় পাকিস্তানের বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে ইউরোপীয় ফাউন্ডেশন ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বলা হচ্ছে, পাকিস্তান এখন ভয়াবহ নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি জানিয়েছে, দেশটির এক্সটার্নাল ফাইন্যান্সিং রিকুয়ারমেন্ট আশঙ্কাজনকভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৩.৬ বিলিয়ন ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে। এছাড়া আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে কোনো কার্যকরী আলোচনা ছাড়াই সম্প্রতি ওয়াশিংটন ছাড়তে হয়েছে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী শওকত তারিনকে। এর মধ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক শীর্ষ দশ বিদেশি ঋণ গৃহীতা দেশের মধ্যে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করে দেশটির বেহাল অর্থনীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশটির সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৯.৯ ট্রিলিয়ন রুপি, যা ইমরানের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম তিন বছরে ছিলো ১৪.৯ ট্রিলিয়ন রুপি। এছাড়া পাকিস্তানের বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। গেল সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। যা তুলনামূলকভাবে মোটেও স্বস্তির নয়।
পাকিস্তানের অর্থনীতিতে যখন এমন বেহাল অবস্থা তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ইমরান খান সরকারের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এর মধ্যে আফগানিস্তান ইস্যুতে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন ইমরান খান। এমন সংকট মুহূর্তে পাশে নেই বন্ধু দেশগুলোর কেউ। চীনও প্রচণ্ড চাপে রেখেছে পাকিস্তানকে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ছাড় দিচ্ছে না শি জিনপিং সরকার। কেননা সম্প্রতি চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরে কাজ করা চীনা নাগরিকদের উপর হামলা ও হত্যাকাণ্ড দুই দেশের সম্পর্কে বিরুপ প্রভাব ফেলেছে। তাই পাকিস্তানের নিরাপত্তা ইস্যুতে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ চীন।
সব মিলিয়ে বিপদ আর অনিশ্চয়তা ভর করেছে ইমরান খান সরকারের উপর। পাকিস্তানের অবকাঠামোগত প্রজেক্টগুলোতে চীনা জনবল ও নির্মাণ সামগ্রীর একক আধিপত্য নিয়ে দেশটির ব্যবসায়ীরা চাপ সৃষ্টি করছে সরকারের উপর। এভাবে বেহাল অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক চাপ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার মধ্যে আরও বড় সংকট তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে। পাকিস্তানের নতুন এতে ইমরান খানের রাজনৈতিক ভবিষ্যত কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এত বিস্তৃত সমস্যা ও উদ্বেগের মধ্যে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইমরান খানের ক্ষয়িষ্ণু সম্পর্ক তুলনামূলক বেগতিক হলে আরও নিদ্রাহীন দুঃস্বপ্নের রাত অপেক্ষা করছে তার জন্য।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) নতুন প্রধান করা হয়েছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ আঞ্জুমকে। তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফায়েজ হামিদের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এই ইস্যুতেও ইমরান খান কতটুকু সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার মধ্যে কান পাতলেই শোনা যায় আসন্ন নির্বাচনে ইমরান খানের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নিয়ে নানামুখী সংকটের কথা।