আগামীকাল বৃহস্পতিবার হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শ্যামা (কালী) পূজা। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এই শ্যামা পুজা হয়ে থাকে। গত বছরের ন্যায় এবারো করোনা মহামারীর দুর্যোগ মাথায় নিয়ে স্বাস্থবিধি মেনে পূজা হবে। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার প্রতিবাদে এবার দীপাবলির উৎসব বর্জনের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।
হিন্দু পূরাণ মতে, কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালি নামের উৎপত্তি। কালী পূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুন্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। কালীপূজার দিন হিন্দু সম্প্রদায় সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করেন। এটিকে বলা হয় দীপাবলী।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মা কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামে শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মন্ডপে মৃন্মময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে আমাবস্যা তিথি শুরু হবে। পরদিন ভোর ৩টা ১৪ মিনিটে আমাবস্যা শেষ হবে। এরআগেই কালী পূজা এবং পূজার পুস্পাঞ্জলি প্রদান ও হোম অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, সবুজবাগ শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, পুরান ঢাকার রাধাগোবিন্দ জিঁও ঠাকুর মন্দির, পোস্তগোলা মহাশ্মশান এবং তাঁতী বাজার, শাখারী বাজার, বাংলা বাজার এলাকার বিভিন্ন মন্ডপ ও মন্দিরে শ্যামা পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এদিকে শ্যামাপূজায় দীপাবলির উৎসব বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বলেছেন, এবার শুধুমাত্র পূজার আনুষ্ঠানিকতা হবে। পূজা চলাকালে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে মন্দিরে নীরবতা পালন করা হবে। মণ্ডপের পাশে ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াও’ স্লোগান লেখা ব্যানার ঝুলানো হবে। এই কর্মসূচী পালনের জন্য সারাদেশের মণ্ডপগুলোতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। দুর্গাপূজা চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।