ঝামেলা ও ওজন দুটোই কমায় রেডি রুটি

ব্যস্ত জীবনে সামান্য অবসরের জন্য কত হাঁসফাঁস করি আমরা। তার ওপর ওজন কমাতে শরীরচর্চা এবং ভাতের বদলে রুটি বানিয়ে খেতে গেলে তো কথাই নেই। এই সমস্যার সমাধান দেবে রেডি রুটি। ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার আলোর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন আতিফ আতাউর

কয়েক দিন ধরেই শরীরে ভারীক্কি ভাব টের পাচ্ছিলেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আহমেদ শাহরিয়ার খান। সপ্তাহে পাঁচ দিন ৯টা-৫টা অফিস। কাজটাও চেয়ারে বসে ব্যাংকের হিসাব মেলানো। তার ওপর সেই মিলে গরমিল হলে বসে বসে মেলানোর সময় আরো বাড়ে। দিনে দীর্ঘ সময় বসে থেকে কাজ করায় শরীরে মেদ বাড়ছিল তার। এখন তো তার ভুঁড়ি নিয়েও বেশ টিপ্পনি কাটেন অনেক সহকর্মী। শরীরচর্চা যে করবেন তার জন্যও খুব একটা সময় পান না শাহরিয়ার। এক ডাক্তার বন্ধুর পরামর্শে রাতে রুটি খাওয়া ধরেছিলেন; কিন্তু রুটি বানাতে ঝক্কির কারণে ওদিকে আর যেতে চান না শাহরিয়ারের স্ত্রী। শেষমেশ রেডি রুটিতে পেয়েছেন সমাধান। এখন ধীরে ধীরে ওজন কমছে। শরীরেও ফিরে আসছে চনমনে ভাব।

নিয়মিত রুটি খাওয়া বেশ উপকারী, বিশেষ করে তিন বেলা ভাত খাওয়ার পরিবর্তে এক বেলা রুটি খাওয়া বেশি স্বাস্থ্যকর। এতে যেমন দিনের খাবারে ভিন্নতা আসে, তেমনি শরীরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টিমানও নিশ্চিত হয়। কেউ তিন বেলা ভাত খেলে যেমন রুটিতে থাকা পুষ্টি উপাদান থেকে বাদ পড়বেন; আবার তিন বেলা রুটি খেলে ভাতে থাকা পুষ্টিমান থেকে বাদ পড়বেন। এ জন্য দিনের তিন বেলা ভিন্ন ভিন্ন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন পুষ্টিবিদরা। আবার তাতে স্বাদেও বৈচিত্র্য আসে। খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।

রুটি কমবেশি অনেকেই খেতে পছন্দ করে, বিশেষ করে সকালে কিংবা রাতে রুটির সঙ্গে সবজি আর ভর্তার জুড়ি মেলা ভার।

এখন শীতকাল। আর শীতেই রুটির মজা বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু রুটি বানানোর দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও ঝামেলার কারণে অনেকেই এড়িয়ে যায়। তার কারণ ভাত সহজে হয়ে গেলেও রুটির বেলায় ব্যতিক্রম। রুটির জন্য আটা পানিতে গোলানো থেকে শুরু করে মাখা, পিঁড়িতে বেলা, এরপর ঠিকমতো ভাজা—প্রতিটি ধাপই চ্যালেঞ্জিং। কখনো তা বেশি পানির জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নরম তো, আবার কখনো শক্ত ইট! শুধু কি তাই? বেলতে গিয়েও কখনো তা বিশ্ব মানচিত্র, কখনো বা পাতলা পাপড়। এ জন্য নানামুখী উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও রুটি খেতে পারে না অনেকে। তবে এখন এই অজুহাতও আর ধোপে টেকার সুযোগ নেই। কারণ বাজারে এখন নামিদামি অনেক ব্র্যান্ডের রেডি রুটি পাওয়া যায়। এগুলো বাড়িতে তৈরি রুটির মতোই খেতে সুস্বাদু, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানও রয়েছে এতে। এসব রুটি তৈরি হয় হাতের কোনো স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে। তাই নির্দ্বিধায় দিনে-রাতে যেকোনো সময় রুটি খেতে পারেন। ওজন কমবে, স্বাস্থ্য অটুট থাকবে।

শুধু ওজন নয়, ডায়াবেটিস কমাতেও ভাতের বদলে রুটি খাওয়া উপকারী। এ জন্যই রুটি খাওয়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের চেয়ে বাড়ছে। ভাতের চেয়ে আটার ফাইবার বা আঁশ বেশি। ফাইবার এমন এক উপাদান, যেটি আমাদের অন্ত্রে শোষিত হয় না। মলের সঙ্গে অশোষিত অবস্থায় শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এর মানে হলো ফাইবার খেলে পেট ও মন দুটিই ভরবে; কিন্তু তা শরীরে বাড়তি ক্যালরি যোগ করবে না। আবার রুটি ভাত বা অন্যান্য খাবারের মতো দ্রুত হজম হয় না, দীর্ঘক্ষণ পেটে থাকে। ফলে ঘন ঘন খিদে পায় না। বারবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না। শরীরকে বাড়তি খাবার গ্রহণ থেকে রক্ষা করে। এতে শরীরে বাড়তি ফ্যাট যোগ হওয়ার ভয় কমে। আবার রুটির মধ্যে জলীয় উপাদান কম থাকায় আমাদের ঘুম কম পায়। দীর্ঘ সময় তন্দ্রাহীনভাবে কাজ করা যায়।

LEAVE A REPLY