নির্মাণকাজের অতি আবশ্যক পণ্য রডের দাম বেড়েই চলেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাজার তদারকির অভাবে বাড়ছে রডের দাম। আবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায় মনে করছেন রিহ্যাবের সভাপতি। ওদিকে উত্পাদকরা আন্তর্জাতিক বাজারে মেল্টিং স্ক্র্যাপের খরচ বেড়ে যাওয়াকে স্থানীয় বাজারে দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বর—এই সাত মাসে টনপ্রতি ৬০ গ্রেডের রডের দাম বেড়েছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে ৬০ গ্রেডের টনপ্রতি রড কিনতে হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার টাকায়।
গত জুন মাসে রডের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা। এপ্রিল মাসে বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা। তবে এই খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বর্ষা মৌসুমে টনপ্রতি রডের দাম দুই-তিন হাজার টাকা কমিয়ে ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। তবে গত দুই সপ্তাহে রডের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। গত পাঁচ মাসের সর্বোচ্চ দাম হিসাব করলে টনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা বেড়েছে। তবে কোনো কোনো জায়গায় ৮০ হাজার টাকার ওপর টন বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় রড বিক্রি হয়। আবার রডের দাম বাড়ার কারণে আবাসন খাতেও প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা ব্যক্তিরা। বিএসআরএমের রড টনপ্রতি বিক্রি হয় ৭৮ হাজার ৫০০ টাকায়। এ ছাড়া একেএস ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা, জিপিএইচ ইস্পাত ৭৭ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং আরএসআরএম ৭৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আগের সপ্তাহে টনপ্রতি বিএসআরএম রডের দাম ছিল ৭৫ হাজার টাকা, একেএস ৭৪ হাজার টাকা, জিপিএইচ ইস্পাত ৭৪ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৭৩ হাজার টাকা, আরএসআরএম ৭১ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শাহরিয়ার স্টিল মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসুদুল আলম মাসুদ জানান, রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে রডের দাম বেড়ে গেছে। রড তৈরি করার জন্য কাঁচামাল স্ক্র্যাপ প্রয়োজন।
আমদানীকৃত মেল্টিং স্ক্র্যাপের দাম বর্তমানে টনপ্রতি প্রায় ৫৯০ ডলারে পৌঁছেছে। আবার ভাঙা জাহাজের লোহাও বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। এতে আবার বেড়েছে রডের দাম। কারণ দেশে রড তৈরিতে প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। কয়েক মাস আগেও মেল্টিং স্ক্র্যাপের টনপ্রতি দাম ছিল ৪৯০-৫০০ ডলারে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় উন্নত দেশগুলো এখন আর জাহাজ ভাঙতে চাচ্ছে না। ফলে দেশে জাহাজ ভাঙা স্ক্র্যাপের পরিমাণও কমে গেছে।
শেখ মাসুদুল আলম মাসুদ বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার একজন বিক্রেতার কাছে থেকে ৫৮০ ডলার দরে স্ক্র্যাপ কিনতে চাচ্ছি। সেই বিক্রেতা আমাকে জানিয়েছেন, টনপ্রতি ৫৮৫ ডলারের নিচে বিক্রি করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘সামনে রডের দাম আরো বাড়বে। বিক্রি পর্যায়ে ভ্যাট দিতে হয় দুই হাজার হাজার টাকা। সরকার এক হাজার ৫০০ টাকা কমিয়ে ৫০০ টাকা ভ্যাট নির্ধারণ করলে রডের দাম খুচরা পর্যায়ে কমবে বলে আশা করা যায়।’
জাহাজের তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকা থেকে জাহাজের টুকরার সরবরাহ কম। অন্যদিকে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে পুরো বাজারব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়েছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, ‘রডের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে প্রজেক্ট বন্ধ করতে হবে, ক্ষতির মুখে পড়বেন আবাসন ব্যবসায়ীরা।’
তিনি বলেন, ‘রডের মালিকরা তো বলছেন স্ক্র্যাপের দাম বাড়ছে, কিন্তু বিষয়টি কতটুকু সত্য, তা সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে। তাঁরা তো সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়, তাহলে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ব্যাখা নেই কেন?’
অন্যদিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকায় শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন জানান, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আগে আমদানীকৃত পুরনো জাহাজ থেকে প্রাপ্ত প্রতি টন স্ক্র্যাপের দাম পড়ত ৪০০ ডলার, কিন্তু সংক্রমণের পর টনপ্রতি দাম ৩০০ ডলারে নেমে আসে। যদিও ২০২০ সালের নভেম্বরের দিকে টনপ্রতি ৩৭০-৩৮০ ডলারেও পুরনো জাহাজ আমদানি হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পুরনো জাহাজ টনপ্রতি ৬০০ ডলারের নিচে পাওয়া যাচ্ছে না।