প্রতীকি ছবি
রেমিট্যান্স নিম্নমুখী হওয়ার মধ্যে অর্থনীতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে রপ্তানি আয়। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় এ খাতে আয় বাড়ছেই। ক্রমেই বাড়তে থাকা এই আয় এমনকি লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত নভেম্বরে ৪০৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় ২০২০ সালের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) হিসাবে প্রায় ২০ বিলিয়ন (এক হাজার ৯৭৯ কোটি) ডলার রপ্তানি আয় দেশে এসেছে। এ অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে এই করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ‘ওমিক্রন’ নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, যদি করোনার এই নতুন ধরন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে রপ্তানি বাণিজ্যেও আগের মতো নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। গতকাল বুধবার (১ ডিসেম্বর) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বরে) এক হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় এক লাখ ৬৮ হাজার ২১৫ কোটি টাকার সমান। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে যে পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তা ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল তিন হাজার ৮৭৬ কোটি ডলারের পণ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছরের পণ্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে চার হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ২৭ শতাংশ রপ্তানি বেশি হয়েছে।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে তৈরি পোশাক ছাড়াও কৃষি প্রক্রিয়াজাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ও হস্তশিল্প রপ্তানি বেড়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমেছে সাড়ে ১৭ শতাংশ।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, এক হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের মধ্যে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার রপ্তানি আয় তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এই আয় গত বছরের চেয়ে ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি।
মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। এছাড়া ৫৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত, ৫৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮০ দশমিক ১১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ৮৯৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ৬৮৭ কোটি ডলার। আয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের মোট লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্য ধরা আছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন হাজার ৩৬৭ কোটি (৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম।
বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, গত তিন মাসের প্রবৃদ্ধির ধারা ইতিবাচক হলেও এই প্রবৃদ্ধি স্থায়ী নাও হতে পারে। কারন কোভিড জনিত লক-ডাউন শিথিল করার কারনে বিগত মাসগুলোতে পোশাকের ব্যবহার ও চাহিদা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। যদি আমরা ২০২১ এর নভেম্বর মাসের রপ্তানি আয়ের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যায় এ সময়ে তিন দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, অর্থাৎ ৩২% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে রপ্তানির পরিমান ছিল দুই দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা ২০২১ সালের অক্টোবরে তিন দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছি এবং নভেম্বরে সেটি তিন দশমিক দুই ডলারে নেমে এসেছে। যদিও আমরা সাধারনত একই বছরের পর পর মাসের রপ্তানির মধ্যে তুলনা করি না, কেননা এটি অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে।
টেক্সটাইল, ডাইস ও রাসায়নিকসহ অন্যান্য কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া দরকার জানিয়ে রুবেল বলেন, ফ্রেইট খরচ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটা স্পষ্ট যে রপ্তানি মূল্যের যে আপাত বৃদ্ধি হয়েছে তা মূলত কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি জনিত ব্যয়কে সমন্বয় করেছে। সুতরাং যে রপ্তানী প্রবৃদ্ধি আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কোনও ভাবেই প্রকৃত প্রবৃদ্ধি নয়। যদিওবা বিগত কয়েক মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে এটি ভুলে গেলে চলবে না যে আমাদের কারখানাগুলো অতিমারীর ক্ষয়ক্ষতি এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। রুবেল আরো বলেন, অমিক্রণ নামক নতুন ভ্যারিয়েন্টের আগমনে বৈশ্বিক অর্থনীতি ইতিমধ্যেই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউ থেকেই ক্রেতারা সতর্ক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে, এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে সময়ের সাথে সাথে এই কড়াকড়ি আরো বাড়বে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো তাদের খুচরা বাজারের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ ভাল সময় নিবে, যা আমাদের জন্য বড় দুঃশ্চিন্তার কারন। গত বছরের মত এই বছরেও বড়দিনের বিক্রি ক্ষতিগ্রস্ত হলে কারখানাগুলো তাদের উৎপাদন চালিয়ে নিতে হুমকির মধ্যে পড়বে। আর- এমএস / ডি- এইচএ