পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে মাত্র আড়াই দিনে ইনিংসের ব্যবধানে হারার পরও যাঁকে বলতে শোনা গেছে যে তাঁদের ব্যাটিং ভাবনা ঠিকই ছিল। বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফোনের ওপার থেকে সাবেক প্রধান নির্বাচক হাসতে হাসতেই বললেন, ‘এক সেশনে ৩০ ওভারের মধ্যে (চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ২০.৪ ওভারের মধ্যে) ৭ উইকেট হারানোর পরও যদি কেউ এ রকম অজুহাত দেয়, তাহলে বলতে হবে ২১ বছর ক্রিকেট খেলে আমি আসলে কিছুই খেলিনি!’
মিরপুরের টার্নিং উইকেটে রক্ষণে আত্মরক্ষার উপায় ছিল না বলে ব্যাটাররা বুঝেশুনে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাটিং করেছেন বলে যে দাবি মমিনুলের, সেটির সঙ্গে একমত হলেন না বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদীন ফাহিমও, ‘প্রথম ইনিংসে তো প্রায় সবাই আগ্রাসী ক্রিকেট খেলল। এর ফল কী হলো, তা তো আমরা দেখলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিক, লিটন ও পরে সাকিব ধরে খেলল। একটু রক্ষণাত্মক খেললে যে ভালো খেলা যায়, এর প্রমাণ তো ওরা নিজেরাই রাখল।’
সেই প্রমাণ থাকার পরও মমিনুল কোনো ভুল দেখেননি। তিনি একা নন, চতুর্থ দিনের শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে প্রায় একই কথা বলতে শোনা গেছে নাজমুল হোসেন শান্তকেও। কেন তাঁরা এ রকম বলছেন? সমস্যাটি কোথায়? ফাহিম ও ফারুক—দুজনই চিহ্নিত করতে পারলেন তা। ফাহিম বলছিলেন, ‘রক্ষণ করতে করতে ম্যাচ বাঁচিয়ে ফেলাও ক্রিকেটের একটা সৌন্দর্য। ১৫০ বল খেলে ৩০ রানের ইনিংসও কিন্তু ডাবল সেঞ্চুরির সমানই। আমার মনে হয়, (ওদের) বোঝার মধ্যে একটি ভুল বোধ হয় আছে। কোচের কৌশলও যদি এ রকমই হয়ে থাকে, তাহলেও বলব বোঝার ভুল আছে।’
খেলা দেখে ও মমিনুলের কথা শুনে ফারুক এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন যে ‘ছেলেদের বুঝতে হবে, ওরা যেসব কথা বলে, সেগুলো ওরা নিজেরা কতটুকু বিশ্বাস করে? যদি কেউ বলে সাজিদকে (পাকিস্তানি অফস্পিনার) মেরে ৮ উইকেট দেওয়াই ঠিক অ্যাপ্রচ ছিল, এই কথা আমি মানতেই রাজি নই। এর মানে, আপনার মাথায় সমস্যা আছে। ড্র করলে আজ কিছু পয়েন্ট পেতেন। পাকিস্তান ৩০০ করেছে। আপনার হাতে আছে আর চারটি সেশন। এক সেশনে মেরে মেরে উইকেট যদি দেবেনই, তাহলে পরের দিন খেলা বদলালেন কেন? বোঝালেই তো আমি বুঝব না।’
ফারুক বরং পাকিস্তানের ইনিংস থেকে মমিনুলদের শেখার অনেক কিছু ছিল বলে মনে করেন, ‘ফিফটি করল ফাওয়াদ আলম আর মোহাম্মদ রিজওয়ান। কত বলে করেছে? ওরাও কিন্তু খুব দ্রুত খেলেনি। তাড়া থাকলে নিশ্চয়ই ওরাও টি-টোয়েন্টি বা অন্তত ওয়ানডের মতো খেলত। তা খেলেছে কি? এর মানেই হলো ওরা ঠিক করেছিল নিজেরা সুবিধামতো জায়গায় গিয়ে তবেই প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেবে।’
মমিনুলরা উল্টো সফরকারীদের সুবিধা করে দিয়েছেন বলে মনে করেন ফাহিমও, ‘‘আমাদের ছেলেরা ডেড ডিফেন্স করতে পারলে পাকিস্তানকেও ‘প্ল্যান বি’তে যেতে হতো। তখন ওরা অন্যভাবে বোলিং করতে বাধ্য হতো। কিন্তু ওদের ‘প্ল্যান এ’ থেকে বের হওয়ারই দরকার পড়েনি কোনো। বাংলাদেশের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ওরাও বুঝে গিয়েছিল যে প্রথম পরিকল্পনায়ই কাজ হবে।’’