বরিশালের হিজলা উপজেলার কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম, যিনি পুলিশ কনস্টেবল পদে চলমান নিয়োগ পরীক্ষায় সব স্তরে উত্তীর্ণ হন। এরপরও শুধু স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তার চাকরি হবে না বলে গত সপ্তাহে তাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন হিজলা থানার ওসি মো. ইউনুস মিয়া।
এরপর এই ছাত্রীর চাকরি না হওয়ার অনিশ্চয়তার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়। শুরু হয় দেশব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা। প্রশাসনসহ অনেকে তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয় তাকে ঘরসহ পুলিশে চাকরির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এই আসপিয়ার মতো পুলিশে চাকরি পাননি আরও এক নারী। তিনিও পরীক্ষার সব স্তরে উর্ত্তীণ হয়েছিলেন। কিন্তু তারও সেই একই গল্প। স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। চাকরি না পাওয়া এই নারীর নাম দিবা রায়। তবে ফেসবুকে তিনি ইশিকা পিউ নামে পরিচিত।
আজ শনিবার নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সেই করুণ কাহিনি বর্ণনা করেছেন দিবা রায়। বলেছেন, এতদিন চুপ ছিলেন। আর নয়, অধিকার আদায়ে এবার লড়বেন।
তার স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো-
‘সরকারি চাকরি করাটা সবার স্বপ্ন, সেটা হোক ছোট বা বড় যেকোনে পদে। সেই স্বপ্ন চোখে নিয়েই ২০১৯ এর দিকে আমিও পুলিশের নিয়োগ পেয়ে ছুটে যাই। তারপর হাজার হাজার ছেলে-মেয়ের মাঝ থেকে আমিও সব পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু শেষ দিন এসে, যেদিন ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়, যারা সফলভাবে চাকরির জন্য উত্তীর্ণ হয় তাদের, সেদিনি এসে আমি জানতে পারি আমার নাম বাতিল করা হয়েছে। কারণ, জানতে চাইলে আমাকে ভূমিহীন বলে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। খুব ভেঙে পড়েছিলাম, খুব কেঁদেছিলাম। মনে হয়েছিল, আমার স্বপ্ন যেন এক নিমিষেই শেষ করে দিল তারা। আমার চাকরি হওয়ার পরও আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দেননি একজন এসপি স্যার। উনাকে আমার একটাই প্রশ্ন- আমার আপরাধ কী ছিল? অন্যজনের চাকরি হয়েছে আমার কেন হয়নি? আমার একটাই ভুল ছিল, আমি সরলমনে কিছু বুঝতে না পেরে, আমি আমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করিনি। আমাকে আমার আশপাশে থাকা প্রশাসনিক কর্মীরা একটা বারও বলেননি যে, কাগজে-কলমে আমার কী লিখতে হবে, আমি তাদের কাছে জানতে চাইলে, তারা আমাকে বলেন- যেখানে থাকেন সেটাই লিখে দিন। তাই বলে আমার চাকরি কেড়ে নেবে আমার কাছ থেকে। আমি তবুও থেমে থাকিনি। আমাকে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী একজন স্যার সহযোগিতা করেছেন, আজ নাম বলব না উনার, সময় হলে বলব।’
‘আমি কী করিনি এই চাকরির জন্য? ঢাকা হেডকোয়ার্টার গিয়েছিলাম। চিঠি প্রেরণ করি, সেটা গ্রহণও হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেন কোনো উত্তর আসেনি? কেন অন্যদের চাকরি হচ্ছে, যাদের যোগ্যতা নেই তাদেরও হচ্ছে। আমার যোগ্যতাই আমি পেরেছি, কিন্তু আমার কেন হয়নি? কেন তারা আমার সঙ্গে অন্যায়টা করলেন? এটাই আমার প্রশ্ন। তারা আমার সঙ্গে অন্যায় করেছেন। যেখানে আমি আমার সব ধরনের কাগজপত্র তাদের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। তাই এখন আমি লড়ব আমার অধিকার আদায়ের জন্য। কারণ, আমার যোগ্যতায় আমি উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি স্বচ্ছ নিয়োগ পেয়েছিলাম। তাহলে কেন হয়নি আমার চাকরি? আমি এর প্রতিদান না পাওয়া পর্যন্ত চুপ করে বসে থাকব না। এতটা দিন চুপ করে বসেছিলাম, কবে এর উত্তর আসবে সেই আশায়। কিন্তু আর নয়, আমি এর জবাব চাই।আমার একটাই আবেদন, আমি আমার চাকরিটা ফিরে পেতে চাই।’