সাক্ষীর জবানিতে জান্তাপ্রধানসহ ছয় জেনারেলের নাম

আর্জেন্টিনার ফেডারেল আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন ব্রুকের সভাপতি তুন খিন আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে মিয়ানমারে তাঁর, তাঁর পরিবারের ওপর নির্যাতন এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার বর্ণনা দেন। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ভোরবেলায় এই সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

তুন খিনের সাক্ষ্যে রোহিঙ্গা গণহত্যার পরিকল্পনা প্রণয়ন, নির্দেশদাতা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (বর্তমানে জান্তাপ্রধান) সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংসহ আরো কয়েকজন জেনারেলের নাম উঠে এসেছে।

তুন খিন গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছি। এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমার সাক্ষ্যে এ পর্যন্ত মিয়ানমার বাহিনীর ছয়জন জেনারেলের নাম এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘এই মামলা রাতারাতি শেষ হবে না। তবে আমি বিশ্বাস করি, শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ন্যায়বিচার পাবে।’

তুন খিন বলেন, ‘আদালতের কাছে আমি তদন্তের আবেদন জানিয়েছি। এর অংশ হিসেবে মিয়ানমারে অপরাধ তদন্তে জাতিসংঘ গঠিত আন্তর্জাতিক, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কাঠামো (আইআইএম) ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের আবেদন জানিয়েছি। আদালত এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানাবেন।’

আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের ফেডারেল ক্রিমিনাল কোর্টের দ্বিতীয় চেম্বার আদালত গত ২৬ নভেম্বর ‘সর্বজনীন এখতিয়ার’ নীতির আওতায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জেনোসাইডের বিচার শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারে সর্বজনীন এখতিয়ার নীতি প্রয়োগের ঘটনা বিশ্বে এটিই প্রথম। সর্বজনীন এখতিয়ার নীতির আওতায় ভয়ংকর অপরাধের বিচার বিশ্বের যেকোনো স্থানে করা যায়।

তুন খিন গতকাল আর্জেন্টিনার আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক বাহিনীর যৌন নির্যাতনসহ ব্যাপক মাত্রায় নিপীড়নের বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা পরিবারে জন্ম নেওয়ার অপরাধে তাঁকে মিয়ানমারে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে দেওয়া হয়নি। বৈষম্য, নির্যাতন-নিপীড়নের কারণে তাঁর মা-বাবা ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন।

তুন খিন তাঁর সাক্ষ্যে ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও তাদের দোসরদের নিপীড়নের বর্ণনা দেন। ছুট পিন গ্রামে রোহিঙ্গা গণহত্যার উদাহরণ তুলে ধরে তিনি জানান, সেখানে মিয়ানমার বাহিনী কয়েক শ রোহিঙ্গাকে হত্যা ও রোহিঙ্গা নারীদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়েছে। ছয়জন রোহিঙ্গা নারী সেদিনের ঘটনার সাক্ষী হিসেবে এখনো বেঁচে আছেন।

তুন খিন জানান, তিনি ওই ছয় নারীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

অভিযোগ ফেসবুকের বিরুদ্ধেও : তুন খিন ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিপজ্জনক ভূমিকার কথাও আদালতে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক লেখালেখি, গণহত্যায় উসকানির বিষয়ে ফেসবুক তখন কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

এই অভিযোগে তুন খিনসহ আরো কয়েকজন রোহিঙ্গার পক্ষের আইনজীবীরা গত ৬ ডিসেম্বর ফেসবুকের মূল কর্তৃপক্ষ মেটার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ হাইকোর্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর নর্দান ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেন। তুন খিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে ওই দুই আদালত এখনো সিদ্ধান্ত দেননি।

LEAVE A REPLY