ফাইনালে আজ বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি

মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ সাফের ট্রফি হাতে ভারত ও বাংলাদেশের অধিনায়ক

এ দেশে ছেলেদের ফুটবল যখন হতাশার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন একদল কিশোরী সেই ফুটবল মাঠেই আলো জ্বাললেন। তাঁদের পায়েই হঠাৎ মিলল সত্যিকার নান্দনিকতা। ছেলেদের টানা ব্যর্থতার বিপরীতে সাফল্যও ধরা দিল মুঠোয়। বাংলাদেশ এশিয়ার মূল পর্বে গেল, চ্যাম্পিয়ন হলো সাফে। মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমারা সেই ধারাবাহিকতায় আজ আরো একটা সাফ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে।

অনূর্ধ্ব-১৯ এই সাফের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে নেপালকে হারিয়ে জেতা শিরোপাটাই আজ ধরে রাখার পালা ভারতের বিপক্ষে। ভারত এই অঞ্চলে কোন খেলায় ছড়ি ঘোরায় না! কিন্তু বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবল মাঠ মাতাচ্ছে এই ভারতকেই যখন-তখন হারিয়ে দিয়ে। কমলাপুর স্টেডিয়ামেই ২০১৭ সালে ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের শিরোপা জেতে বাংলাদেশের কিশোরীরা। সেই আসরে গ্রুপ পর্ব ও ফাইনালে দুইবার ভারতকে হারায় বাংলাদেশ। এবারের সাফেও এরই মধ্যে একবার তাদের হারানো হয়ে গেছে। ভারত নেপালকে হারিয়ে দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে বাংলাদেশের মুখোমুখি হয়েছে ফাইনালে। তবে বাংলাদেশ ও নেপাল দুটি ম্যাচেই নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিয়েছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশের বিপক্ষে সমানে সমানে লড়াই হয়েছে। স্বাগতিকদের জয় পেনাল্টি থেকে করা একমাত্র গোলে। এই হারে নেপালের বিপক্ষে বাঁচা-মরার সমীকরণে পড়ে গিয়েছিল ভারত। ফাইনালে যেতে হলে নেপালের ড্র করলেই হতো, কিন্তু ভারতকে জিততেই হতো। প্রিয়াংকা দেবীর একমাত্র গোলে সেই কঠিন ম্যাচটা জিতেই আজ বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন সুমতি কুমারীরা।

ভারতীয় কোচ অ্যালেক্সের বিশ্বাস উপভোগ্য একটি ফাইনাল হতে যাচ্ছে এটি, ‘ঘরের মাঠে বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে কঠিন প্রতিপক্ষ। আর দলটি আমাদের তুলনায় যথেষ্ট অভিজ্ঞও। কারণ ওদের (বাংলাদেশের) অনেক খেলোয়াড়ের সিনিয়র জাতীয় দলে খেলারও অভিজ্ঞতা আছে। তবে আমরাও চাই এমন শক্ত প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই নিজেদের মেলে ধরতে। তাতে উপভোগ্য একটা ফাইনালের প্রতিশ্রুতি অন্তত দিতে পারি।’ বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানীও সেই আহ্বান জানিয়ে রেখেছেন তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশে, ‘আমাদের মেয়েরা ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো খেলেই আজ ফাইনালে। এই ম্যাচে আরো ভালো ফুটবল প্রত্যাশা আমার তাদের কাছ থেকে। কারণ এটা ফাইনাল, অনেক দর্শক মাঠে আসবে। আর সবারই প্রত্যাশা বেড়ে গেছে আমাদের ফুটবলারদের কাছে। তাই আমাদের সেরা ফুটবলটাই খেলতে হবে।’

মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৬ দল মিয়ানমারের মাটিতে মিয়ানমারকে হারিয়ে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে খেলেছে। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকেও কাঁপিয়েছেন মারিয়া, মনিকারা। আজ তেমনই মনে রাখার মতো পারফরম্যান্স চান গোলাম রব্বানী তাঁর শিষ্যদের কাছে। অধিনায়ক মারিয়ার কণ্ঠেও তেমন কিছুরই প্রতিশ্রুতি, ‘টুর্নামেন্টে এখনো পর্যন্ত অনেক কিছুই আমাদের ভালো হয়েছে, আবার ভুল-ত্রুটিও হয়েছে কিছু। সে সব কিছু মাথায় রেখেই আমরা এই ফাইনালের প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করি, ভালো কিছুই হবে।’ ভারতীয় অধিনায়ক সুমতি কুমারী এই প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পাসিং তাদের মনমতো হয়নি, ঘাটতি ছিল ফিনিশিংয়েও। সেটি কাটিয়েই আজ জয়ের আশায় নামছে তাঁর দল। আজ সন্ধ্যা ৬টায় কমলাপুর স্টেডিয়ামে ভারত-বাংলাদেশের মেয়েদের এই লড়াইয়ে তাই রোমাঞ্চের হাতছানি থাকছেই।

LEAVE A REPLY