ঢামেকের সরকারি ওষুধ কোথায় যায়?

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগের সরকারি ওষুধ কোথায় যায়-এমন প্রশ্ন সাধারণ রোগীদের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, ওষুধ না পাওয়ার বিষয়ে তাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। 

গত ২১ ডিসেম্বর ঢামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা সাজু নামে একজনের সঙ্গে কথা হয়। তার বয়স আনুমানিক ৩৫। তিনি ডাক্তার দেখিয়েছেন ১৯ ডিসেম্বর। তার প্রেসক্রিপশনে দেখা যায়, অ্যান্টাসিড, বিসি/রেনোভিট, ক্যালসিয়ামসহ পাঁচ ধরনের ওষুধের নাম লেখা আছে। এর মধ্যে হাসপাতাল থেকে তাকে দেওয়া হয়েছে বিসি/রেনোভিট আর ক্যালসিয়াম। অ্যান্টাসিডসহ বাকি সব বাইরে থেকে কিনে খেতে বলা হয়। অথচ হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে সরকারিভাবে সরবরাহ করা একটি ওষুধের তালিকা দেখতে পাওয়া যায়। ওই তালিকার ৩ নম্বরে আছে অ্যান্টাসিডের নাম। এ ওষুধ তালিকায় থাকলেও রোগীকে দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে সরকারি ওষুধ যাচ্ছে কোথায়? খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঢামেকে সরকারিভাবে ২২০ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও ইনজেকশনও আছে। যেগুলো রোগী বিনামূল্যে পেতে পারেন। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, তালিকায় থাকা ওষুধ যদি ডাক্তার লিখে, তাহলে ভর্তি রোগী এবং বহির্বিভাগের রোগী উভয়েই পেতে পারেন। তবে বহির্বিভাগে কোনো রোগী সরকারি ওষুধ না পাওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা আরও চারজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা হলেন, সুমী, হাসিনা, মনোয়ারা এবং মোশারফ। তাদের প্রেসক্রিপশনে অনেক ওষুধের মধ্যেও ওক্সাপ্রো, ইটোকক্স, গ্লিসারিন ইরিগেশনের নাম পাওয়া যায়। এগুলো তাদের বাইরে থেকে কিনে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। অথচ হাসপাতালে টানানো সরকারি ওষুধের তালিকায় ওই তিন ওষুধের নাম পাওয়া যায়। তালিকার ৪৯ নম্বর সিরিয়ালে আছে ওক্সাপ্রো, ৬৩ নম্বরে আছে ইটোকক্স আর গ্লিসারিন ইরিগেশনের নাম আছে ১২৮ নম্বরে। ঢামেক বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য প্রতিদিন গড়ে ৭-৮ হাজার রোগী আসছেন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক রোগীর জন্য রয়েছেন মাত্র ৮-১০ জন চিকিৎসক। ফলে রোগীপ্রতি দেড় থেকে দুই মিনিট সময় পাচ্ছেন চিকিৎসকরা। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই রোগীর সঙ্গে কথা বলা, তার বক্তব্য শোনা এবং এর মধ্যেই প্রভিশনাল ডায়াগনসিস করে ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। অনেক সময় অপেক্ষার পর চিকিৎসকের দেখা পেলেও এই সময় স্বল্পতায় অসন্তুষ্ট রোগীরা। প্রতিদিন একজন চিকিৎসক ৫০০-এর বেশি রোগী দেখছেন। 

হাসপাতাল সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনের পর হাসপাতালের সক্ষমতা ১ হাজার ৫০ বেড থেকে দুই ধাপে বাড়িয়ে ২ হাজার ৬০০ বেডে উন্নীত করা হলেও সেই তুলনায় জনবল বাড়েনি। ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন পুরান ঢাকার লালবাগ থেকে আসা আসমা আক্তার। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঠান্ড-কাশিতে ভুগছেন তিনি। বেলা ১২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে এসেছেন। আধা ঘণ্টা সময় নিয়ে টিকিট কেটে নাম এন্ট্রি করে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। ৩ নম্বর রূমে চিকিৎসক দেখাতে বলা হয় তাকে। সেখানেও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় আসমাকে। তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ডাক্তার দেখানোর সময়ই শেষ হয়ে যায়। কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে আবার লাইনে দাঁড়িয়ে নাম এন্ট্রি করতে হয়েছে। এরপর ডাক্তার দেখাতে আবার ৮ নম্বর রুমের সামনে সিরিয়ালে দাঁড়াতে হয়। এতেই তার ১ ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে গেছে। অবশেষে ৮ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখেন ডাক্তার নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ডাক্তার এলে সিরিয়াল অনুযায়ী ডাক্তার দেখান তিনি। ২ মিনিটে তার সব সমস্যা শুনে কিছু ওষুধ লিখে দেন ডাক্তার। 

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর এখানে ১০৫০ বেডের জন্য জনবল ছিল ৯৩০ জন। এর মধ্যে চিকিৎসক, নার্স, পেরামেডিকস, টেকনিশিয়ানস ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও ছিল। পরবর্তী দুই ধাপে প্রথমে ১ হাজার ৮০০ এবং পরে হাসপাতালের সক্ষমতা ২ হাজার ৬০০ বেডে উন্নীত করা হয়। হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৮০টি ওয়ার্ড, ৩৬টি ওটি ও ১৪৭টি কেবিন রয়েছে। প্রতিদিন ভর্তি থাকে গড়ে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগী। মেডিসিন, সার্জারি, ইউরোলজি ও গাইনি বিভাগসহ সব বিভাগের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন ৫৮৪ জন।

LEAVE A REPLY