মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং (বাঁয়ে) ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা (ডানে)।
যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত বলে মনে করে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গত বুধ ও বৃহস্পতিবার মিয়ানমার সফর করে এই বার্তা দিয়েছেন। এই সফরে তিনি মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করে ইঙ্গিত দিয়েছেন, মিয়ানমারের দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীলতার জন্য ভারত মধ্যস্থতা করতেও প্রস্তুত।
শ্রিংলার সফর নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার এক
বিবৃতিতে বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব মিয়ানমারের গণতন্ত্রে ফেরা, বন্দি ও
কয়েদিদের মুক্তি, সব ধরনের সহিংসতা পুরোপুরি বন্ধ এবং আলোচনার মাধ্যমে
সমস্যা সমাধান দেখতে ভারতের আগ্রহের বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব জোর দিয়েছেন।
আসিয়ানসহ অন্য দেশগুলো যখন মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে
চলছে, তখন ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের এই সফর আলোচিত হয়েছে। তবে এই সফরের মধ্য
দিয়ে ভারত মিয়ানমারকে তার প্রত্যাশার বিষয়টি জানিয়েছে। বিশেষ করে ভারতের
পররাষ্ট্রসচিব মিয়ানমার নিয়ে আসিয়ানের উদ্যোগের প্রতি জোরালো সমর্থনের কথা
জান্তাকে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার ইস্যুতে আসিয়ানের পাঁচ দফা
ঐকমত্যের আলোকেই সংকটের সমাধান হবে। ওই পাঁচ দফা হলো- অবিলম্বে সহিংসতা
বন্ধ, সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা, আসিয়ান সভাপতির মধ্যস্থতা, মানবিক
সহায়তা এবং আসিয়ানের বিশেষ দূত ও প্রতিনিধিদলের মিয়ানমার সফর ও আলোচনা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণতান্ত্রিক দেশ ও কাছের প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভারত সম্পৃক্ত আছে। মিয়ানমারের জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি স্থিতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ফেডারেল ইউনিয়ন হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত এসব প্রচেষ্টা নতুন করে চালানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব তাঁর মিয়ানমার সফরে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া তিনি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থক ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির প্রতিনিধি, নাগরিক সমাজের কর্মী এবং মিয়ানমারে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শ্রিংলার নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে কারাবন্দি এনএলডি নেতা সু চির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সামরিক জান্তা তাতে রাজি হয়নি। গত ৭ ডিসেম্বর অং সান সু চির কারাদণ্ড হওয়ার পরপরই ভারত এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছিল।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সীমান্ত এলাকাগুলোতে সহিংসতা বন্ধ এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বৈঠকে উভয় পক্ষই বলেছে, তারা তাদের ভূখণ্ড অন্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে দেবে না।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের প্রকল্পগুলোতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও আশ্বাস দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এ মাসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের বাংলাদেশে দুই দফা সফরে মিয়ানমার পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।