হংকংয়ের লিংনান ইউনিভার্সিটি থেকেও তিয়ানআনমেন স্কয়ারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার স্মারক হিসেবে নির্মিত সুপরিচিত ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, স্থানীয় সময় বুধবার রাতে চীনের এ বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি ভাস্কর্য অপসারণ করার পরদিন একই ধরনের আরেকটি ভাস্কর্য অপসারণ করা হলো।
লিংনান ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে ভাস্কর্যটির অবস্থানের চারপাশ ঘিরে ফেলেন। এরই মধ্যে সেই ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। লিংনান ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন প্রেস ব্যুরো এ তথ্য জানিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে হংকংয়ের আলোকচিত্রী এবং কলাম লেখক গ্যালিলিও চেং জানান, ৬.৪ মিটার এবং ৩.২ মিটার উচ্চতার যে দুটি ভাস্কর্য ২০১০ সালে স্থাপন করা হয়েছিল, তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা তিয়ানআনমেন স্কয়ারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনার স্মারক হিসেবে নির্মিত সুপরিচিত ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে স্থানীয় সময় বুধবার রাতে।
১৯৮৯ সালে বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে চীনা কর্তৃপক্ষের হাতে নিহত হয় বেশ কিছুসংখ্যক গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারী। হংকং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করা ‘লজ্জার স্তম্ভ’ নামের ভাস্কর্যটিতে তিয়ানআনমেনে নিহতদের স্মরণে স্তূপীকৃত মৃতদেহ দেখানো হয়েছিল।
ওই ঘটনার স্মরণে নির্মিত যেসব ভাস্কর্য হংকংয়ে এখনো রয়ে গেছে, এগুলো তার মধ্যে অন্যতম। তিয়ানআনমেনের ঘটনা ও এর স্মরণ কমিউনিস্ট চীনের জন্য স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, পুরনো ওই ভাস্কর্য অপসারণের সিদ্ধান্তটি বাইরের আইনি পরামর্শ ও ঝুঁকি মূল্যায়নের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোত্তম স্বার্থে নেওয়া হয়। পুরনো ওই ভাস্কর্য ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বিগ্ন ছিল।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে প্রথম একটি ভাস্কর্য এলাকা ঘিরে ফেলেন। এরপর নির্মাণ শ্রমিকরা রাতভর কাজ করেন। নিরাপত্তারক্ষীরা সেখানে সাংবাদিকদের যেতে বাধা দেন। একই কায়দায় আরেকটি ভাস্কর্য সরানো হলো।
বেইজিং সম্প্রতি হংকংয়ের রাজনৈতিক ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বাড়িয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত আইন পরিষদের নির্বাচনে চীনপন্থী প্রার্থীরা বিপুল বিজয় পেয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে ভাস্কর্যগুলো অপসারণ করা হলো।
ভাস্কর্য নির্মাতা জেনস গ্যালশিওট বলেন, ‘এটি আমাদের একটি লজ্জাজনক ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়, যার কখনোই পুনরাবৃত্তি হওয়া উচিত নয়।’ গ্যালশিওট ভাস্কর্যটির অপসারণকে ‘নৃশংস’ অভিহিত করে বলেন, তিনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করবেন এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করবেন।
১৯৮৯ সালের ৪ জুন বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রের দাবিতে বিক্ষোভের সময় সেনারা গুলি চালালে অনেক বিক্ষোভকারী নিহত হয়।
সূত্র: আল-জাজিরা।