নতুন করোনা সুনামি: ডেলমিক্রনকে দুষছেন বিজ্ঞানীরা

করোনার নতুন ধরন। প্রতীকী ছবি

বিশ্বব্যাপী করোনার ওমিক্রন ধরনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। নতুন এ ধরনের গতিপ্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য এবং এর বিস্তার ঠেকাতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যেই করোনাভাইরাসের আরও একটি ধরন ডেলমিক্রনের কথা সামনে এসেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপজুড়ে নতুন করে যে কোভিড সুনামি শুরু হয়েছে, তার নেপথ্যে ডেলমিক্রন ভূমিকা রাখছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেলমিক্রন করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোর মতো একেবারে নতুন কোনো ধরন নয়। মূলত করোনাভাইরাসের বিদ্যমান দুটি ধরন ডেলটা ও ওমিক্রনেরই সমন্বিত রূপ ডেলমিক্রন।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত করোনার ডেলটা ধরনের আধিপত্য দেখা গেছে। বিশ্বজুড়ে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য এ ধরনই দায়ী বলে মনে করা হয়। করোনাভাইরাসের এ ধরনে আক্রান্ত হলে মারাত্মক উপসর্গ দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি করার ক্ষেত্রেও ঝুঁকি অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার পরও অনেকের স্মৃতিভ্রম, পেশিতে ব্যথা ও চুল পড়ে যাওয়ার মতো দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দেয়।

আর ওমিক্রন ধরন নিয়ে ধারণা করা হচ্ছে এর উপসর্গ মৃদু। এর সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি হলেও মারাত্মক কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন কম হয়। তবে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বিদ্যমান টিকা নিয়ে এবং প্রাকৃতিকভাবে অর্জিত রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দিয়ে ওমিক্রন ধরনকে ঠেকানো যায় না। ওমিক্রনের প্রাথমিক লক্ষণ হলো গলাব্যথা, মাথাব্যথা ও ক্লান্তিবোধ। তবে ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়ার ঘটনা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি।

ডেলটা ও ওমিক্রন ধরনের সমন্বিত রূপ ডেলমিক্রনকে উচ্চ সংক্রমণক্ষমতার ধরন বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর উপসর্গও মারাত্মক। তবে ডেলমিক্রন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। ডেলমিক্রনের সম্ভাব্য সাধারণ কিছু উপসর্গ হলো উচ্চ তাপমাত্রা, ক্রমাগত কাশি, স্বাদ ও গন্ধ না পাওয়া কিংবা স্বাদ-গন্ধে পরিবর্তন আসা, মাথাব্যথা, সর্দি ও গলাব্যথা।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে চিকিৎসকদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়, যেসব মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, যারা বয়স্ক ও ও জটিল রোগে ভুগছেন, তারা ডেলটা ও ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন। যেসব এলাকায় টিকা নেওয়া মানুষের সংখ্যা কম, সেখানেও ডেলটা ও ওমিক্রন ধরনের প্রকোপ দেখা দিতে পারে। তবে এই দুই ধরনের সমন্বিত রূপ ডেলমিক্রন শক্তিশালী ধরন হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

মডার্নার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা পল বুর্টন মনে করেন, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে ডেলটা ও ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত হলে নতুন শক্তিশালী ধরনের আবির্ভাব হতে পারে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটিকে তিনি বলেন, হতে পারে করোনার এ ধরন দুটি নিজেদের মধ্যে জিন অদলবদল করবে এবং অনেক বেশি বিপজ্জনক ধরন হিসেবে আবির্ভূত হবে।

ডেইলি মেইলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বুর্টন বলেন, মহামারির শুরুর দিকের তথ্যসংবলিত কিছু নথি আবারও প্রকাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেখানে দেখা গেছে, কম রোগ প্রতিরোধ–ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ নিশ্চিতভাবে ভাইরাসের দুটি ধরনেই আক্রান্ত হতে পারেন। অন্য গবেষকেরাও সতর্ক করে বলেছেন, দুই ধরনের সমন্বয় হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। তবে পরিস্থিতি ভাইরাসের অনুকূলে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এসএইচ

LEAVE A REPLY