বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সিটি কর্পোরেশন ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। ইউএনও’র দায়ের করা মামলার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লোকমান হোসেন সিটি মেয়রসহ ২৮ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে গত ৬ ডিসেম্বর অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
অপর মামলায় মেয়রসহ ৯৪ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে গত ৭ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ হোসেন। তবে পুলিশের দেয়া দুটি প্রতিবেদন আদালত এখনও গ্রহণ করেনি। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতে ওই দুই মামলার ধার্য তারিখ থাকায় ওই সময় শুনানি শেষে প্রতিবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার ও পোস্টার অপসারণকে কেন্দ্র করে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সাথে ইউএনও’র বাসভবনে দায়িত্বরত আনসারদের বাদানুবাদ হয়। এক পর্যায়ে সেখানে ইউএনও এবং কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কিছু সময়ের মধ্যে সেখানে জড়ো হলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে আনসার সদস্যরা। এতে আওয়ামী লীগ এবং সিটি কর্পোরেশনের ৬০ জন কর্মী আহত হয়। ওই ঘটনায় কয়েকজন আনসার সদস্য এবং পুলিশও আহত হয়।
ঘটনার পরদিন ১৯ আগস্ট সদর উপজেলা তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে তার সরকারি বাসভবন ও দায়িত্বরত আসনার সদস্যদের উপর হামলার অভিযোগে মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহকে প্রধান সহ ২৮ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। একই ঘটনায় কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক শাহজালাল বাদী হয়ে মেয়রসহ ৯৪ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩ থেকে ৪শ’ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।
ইউএনও’র মামলা শুরুতে তদন্ত করেন কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন। তিনি বদলী হয়ে যাওয়ায় গত ১৯ নভেম্বর থেকে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন মামলার দায়িত্ব পান। ৬ ডিসেম্বর মেয়র সহ ২৮ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তিনি। যথেষ্ট সাক্ষী-প্রমাণ না থাকায় মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে বলে জানান কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন।
এদিকে ওই ঘটনায় মেয়রসহ ৯৪ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩ থেকে ৪শ’ জনকে আসামি করে উপ-পরিদর্শক শাহজালালের দায়ের করা মামলায়ও গত ৭ ডিসেম্বর একই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। যথাযথ সাক্ষী না থাকায় তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) খন্দকার ফরিদ হোসেন মেয়র সহ ৯৪ আসামিকে অব্যাহতি সুপারশি করে এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন বলে জানান কোতোয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লোকমান হোসেন।
অপরদিকে প্রশাসনের মামলার পাল্টা হিসেবে প্যানেল মেয়র এবং সিটি কর্পোরেশনের এক হিসাব রক্ষক বাদী হয়ে ইউএনও এবং ওসি সহ প্রায় অর্ধশত জনকে আসামি আদালতে পৃথক দুটি মামলা করেন। ওই মামলা তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সম্প্রতি ইউএনও এবং ওসি অন্যত্র বদলী হয়ে যান।