মমিনুলের ক্রিকেটজীবনে স্বস্তি নেই

বাংলাদেশ দলের দেশে ফেরা দুই রকমের হয়—কখনো উচ্ছ্বাস, কখনো বা তীব্র হতাশার। কখনো ভক্তরা ঘিরে ধরেন ভালোবাসায়, আবার বিমানবন্দরের কর্মচারীদের কাছেও হেনস্তা হওয়ার ইতিহাস আছে। এই বৈপরীত্য জাতীয় দলের সাফল্য-ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করে। তবে গতকাল মমিনুল হকের অধিনায়কজীবনে নিশ্চিতভাবেই নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে, নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর টেস্ট দলকে ঘিরে এমন আতিশয্য তো আর তিনি দেখেননি!

১-১ টেস্ট সিরিজ ড্র করা এই ফেরার মাহাত্ম্য অনেক। সেসবের চর্চা আগেই হয়েছে। মমিনুলদের বরণ করে নেওয়ার অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানটাই শুধু বাকি ছিল, গতকাল সেটিও হয়ে গেছে।

‘কেন এই হাল দলের’—এমন কটু প্রশ্ন শুনে অভ্যস্ত মমিনুলকে কাল প্রত্যাশিতভাবেই প্রথম প্রশ্নটি করা হয়েছে—এই ফেরা কতটা স্বস্তির? বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক ক্যারিয়ারের শুরুতে একের পর এক সেঞ্চুরি মেরেও স্বস্তিতে শিস বাজাননি। তিনি মমিনুল অন্য এক দর্শনে বিশ্বাসী, ‘ক্রিকেট খেলায় স্বস্তি বলতে কিছু নেই। কোনো সময় ভালো খেলবেন, কোনো সময় খারাপ খেলবেন। কোনো সময় প্রক্রিয়া ঠিক হবে, কোনো সময় হবে না। আলহামদুলিল্লাহ যে আমরা একটা ম্যাচ জিতেছি। তবে শেষ ম্যাচ যেভাবে খেলেছি, একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি খুব একটা খুশি না। আমাদের দ্বিতীয় টেস্টটা আরো ভালো খেলা উচিত ছিল।’

এর পরও নিউজিল্যান্ড থেকে সিরিজ ড্র করে আসা অন্য কোথাও প্রায় জয়ের সমান! মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের কাছে হারের আগে ঘরের মাঠে টানা ১৭ টেস্ট অজেয় ছিল নিউজিল্যান্ড। বর্তমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের আঙিনায় বুক কাঁপে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত দলগুলোরও। সেখানে কর্তৃত্ব করে টেস্ট জেতা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। মমিনুল এই অর্জনের কৃতিত্ব দিচ্ছেন দলের সবাইকে, ‘কোনো জাদুমন্ত্র ছিল না, আমরা প্রক্রিয়াটা ঠিক রাখার চেষ্টা করেছি। যে জায়গায় উন্নতি করা দরকার সে জায়গায় উন্নতির চেষ্টা করেছি। দল হিসেবে ভালো খেলার চেষ্টা ছিল। বাংলাদেশ দল তখনই ভালো করে যখন সবাই পারফরম করে। এক-দুজন ভালো করলে বাংলাদেশ ভালো করে না, বিশেষ করে টেস্টে। টেস্টে আমরা তখনই ভালো ফল করি যখন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই আমরা দল হিসেবে ভালো করি।’

নিউজিল্যান্ডে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের পর একটি জোর আলোচনা শুরু হয়েছে ক্রিকেট অনুসারী মহলে। ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলতে একমাত্র মুশফিকুর রহিম ছিলেন মমিনুলের দলে। তাতে তরুণরা সুযোগ পেয়েছেন এবং কাজেও লাগিয়েছেন। এই সাফল্য কি টেস্ট অধিনায়কের মনেও পরিবর্তনের হাওয়া বইয়ে দিচ্ছে? মমিনুল সে হাওয়ায় একটুও দোলেননি, ‘একটা টেস্ট ম্যাচ গেছে, জুনিয়ররা সবাই পারফরম করেছে। একটা ম্যাচ দিয়ে সব কিছু বিচার করা কঠিন। আমার মনে হয়, সিনিয়র-জুনিয়র কিংবা আমরাও খেলি। দিনশেষে দল হিসেবে খেলতে না পারলে ফল আনা কঠিন।’

প্রতিষ্ঠিত কয়েকজনের অনুপস্থিতি, নিউজিল্যান্ডের দুর্ভেদ্য কন্ডিশনের সঙ্গে তৃতীয় একটি প্রতিরোধও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল মমিনুলদের সামনে—কোয়ারেন্টিন। শুরুতে অভিশপ্ত মনে হওয়া এই ঘরবন্দি জীবনই হাসিমুখে দেশে ফেরার সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে মমিনুলের, ‘জিনিসটা (কোয়ারেন্টিন) কিভাবে নেবেন, তার ওপর নির্ভর করছে। আমার তো মনে হয় কোয়ারেন্টিন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কোয়ারেন্টিনে যখন আমরা ১১ দিন ভেতরে (বায়ো-বাবল) ছিলাম…এরপর বের হলাম, তখন আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। একসঙ্গে কাজ করার কারণে টিম বিল্ডআপটা হয়েছে।’

LEAVE A REPLY