দেয়াল তুলে নেয় বিপিএল

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে লাভজনক আসর। তবে একটা দৈন্যে আবার অন্য সব আসরের সঙ্গে একই সমতলে। নিজস্ব প্র্যাকটিস সুবিধা নেই কোনো দলেরই। তাই আসরটি এলে মিরপুরের একাডেমি মাঠ গিজগিজ করে ক্রিকেটার-কোচিং স্টাফে। প্র্যাকটিসের সময়টায় ভীতি ছড়ায় চারপাশে, কোথা থেকে আবার উড়ে এসে না পড়ে বল! সেই ভিড়ে অনবদ্য কিছু ছবিও দেখা যায়। প্রতিপক্ষের দেয়াল যেন তুলে দেয় বিপিএল।

নতুন হেয়ারস্টাইলের মাশরাফি বিন মর্তুজাকে একাডেমি মাঠে দেখেই যেমন চিৎকার করে ওঠেন, ‘গজনি!’ ঢাকা দলের মাশরাফি উচ্ছ্বাসে বুকে জড়িয়ে ধরেন খুলনার মুশফিককে। আরেকটা ফ্রেম আরো চোখে পড়ার মতো। ঢাকার তামিম ইকবালকে ফুটওয়ার্ক নিয়ে হাতে-কলমে কী যেন দেখাচ্ছেন কুমিল্লার হেড কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জমে ওঠা একেকটা আড্ডার দৃশ্য দেখে বোঝা মুশকিল কে কোন দলের

তামিমকে ফুটওয়ার্ক-সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই অবশ্য সতর্ক সালাউদ্দিন, ‘আমাদের (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস) আজ প্র্যাকটিস ছিল না। এমনিতেই মাঠে গিয়েছিলাম। একটা মাঠে ছয়টা দল অনুশীলন করে। তাই মাঠে গেলে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। তামিমের সঙ্গেও দেখা হয়েছে। ও একটা ব্যাপার জানতে চেয়েছিল, সেটা দেখিয়ে দিয়েছি।’ তবে শিক্ষক হিসেবে ছাত্রের প্রতি দায়বদ্ধতাও এড়িয়ে যাননি তিনি, ‘একজন কোচ হিসেবে বিষয়টি দেখেছি। যেকোনো কোচই এটা করতেন।’ কিন্তু বিপিএল মাঠে নামলেই এই দায়িত্ববোধ কিছুদিন তুলে রাখবেন বলে জানিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘তবে দলের প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেলে, বিশেষ করে টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে গেলে আমি আমার ড্রেসিংরুমের বাইরে কোনো কাজ করব না। টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে গেলে আবার আমার দরজা খোলা থাকবে যে কারোর জন্য।’

‘শত্রুতা’র দেয়াল তুলে দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট। বিশ্বের অনেক দেশেই ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট হয়। তাতে এক লিগের প্রতিপক্ষ ক্রিকেটার অন্য লিগে একই ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়েন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ থাকে শুধু বাইশ গজেই, বাইরে সবাই সবার বন্ধু। মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, নুরুল হাসানের কাঁধে হাত দিয়ে আড্ডায় মশগুল হওয়ার দৃশ্য অভাবিত কিছু নয়।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এই সুখী পরিবারসুলভ ব্যাপারটির বিস্তৃতি আরো বেশি। তেমন একটি উদাহরণ দেখা যাবে এবারের বিপিএলেই। ফরচুন বরিশালের রণপরিকল্পনা যেমন জোট বেঁধে করবেন খালেদ মাহমুদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম! প্রথমজন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রধান কোচ। আর দ্বিতীয়জন ফরচুন বরিশালের মেন্টর। অথচ গত নভেম্বরে এই দুজন বিসিবির নির্বাচনে একটি পদের প্রার্থী ছিলেন। প্রকাশ্যে বিষোদগার না করলেও দুজনের দুটি পথ কিন্তু ছিল। এবারের বিপিএল প্রতিদ্বন্দ্বী দুজনকে আবার একই পথে নিয়ে এসেছে। ফরচুন বরিশালের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে একই টেবিলে বসে দলও গড়েছেন ক্রিকেটার্স ড্রাফটের দিনে।

LEAVE A REPLY