বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের যথেষ্ট সংকট রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হবে। কারণ নিরাপদ খাদ্য শুধু হাতেগোনা মানুষের অধিকার নয়। বরং ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের অধিকার।
আজ বুধবার জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট আয়োজিত ‘নিরাপদ খাদ্য যোগানঃ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনা সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন অ্যাকশন এইড-এর ডেপুটি ম্যানেজার অমিত রঞ্জন দে, উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, বিসেফ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাঈমা আকতার।
সভায় অমিত রঞ্জন দে বলেন, ধনীরা দামী রেস্তোরায় প্রচুর খাদ্য অপচয় করছে, অপরপক্ষে দরিদ্র মানুষেরা পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছে। খাদ্যের অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং জনস্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিভিল সোসাইটিসহ সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
সভায় ফরিদা আখতার বলেন, অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণের ফলে প্রায় ২০০টি রোগ মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে। প্রতি বছর মারা যায় প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার মানুষ, যার ৩০ শতাংশই শিশু। খাবারকে আকর্ষণীয় করতে গিয়ে কৃত্রিম রং ও সুগন্ধি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশীয় বীজ ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা বলেন, পুঁজিবাদ ও শিল্পায়নের ফলে কৃষকরা জমিতে অধিকার হারাচ্ছেন। এরপর কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রণোদনার বিষয়ে আমরা উদাসীন। এছাড়া সঠিক সময়ে বিকল্প জৈব সার ও জৈব বালাইনাশকের ব্যবস্থা করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন, মজুত, পরিবহন, বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে অনেকগুলো অংশীদার রয়েছে। তাদের সকলের সমন্বয় জনগণের নিরাপদ খাদ্য অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। খাদ্য শস্য বিপণন ও বাজারজাতকরণে সড়ক ব্যবস্থার পাশাপাশি রেল ও নৌ ব্যবস্থাকে আরও সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।