রাজধানীর ভাটারা এলাকায় বান্ধবীর বাসায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই ধারণা করছে পুলিশ। তবে নিহতের পরিবার এটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলে অভিযোগ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভাটারার নুরের চালা এলাকায় বান্ধবীর বাসা থেকে নাজমুল আলম সেজান (২১) নামের ওই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
যদিও আজ বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।
তবে সেজানের বান্ধবী ও তাঁর মাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে রেখেছে ভাটারা থানার পুলিশ।
ভাটার থানার ওসি মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘মামলার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। মিটিংয়ে আছি, এখন আর কিছু বলা যাচ্ছে না। ’
তদন্ত কর্মকর্তা শেখ জাহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঘটনার যেসব আলামত পাওয়া যাচ্ছে, সেই হিসেবে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে যদি কিছু বের হয়ে আসে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
সেজানের বান্ধবী ও মায়ের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না হলে কারো বিরুদ্ধে কিভাবে মামলা নেব? নিহতের পরিবারের অভিযোগ এবং পুলিশের তদন্তে যদি কিছু উঠে আসে সে হিসেবে মামলা নেওয়া হবে। মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে কী মামলা হবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। ’
শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, ‘মা আর মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আপাতত থানায় আনা হয়েছে। ’
নাজমুলের বাবা সাইফুল আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার ছেলেকে তারা মেরে ফেলেছে। আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে ছেলেকে আর জীবিত পাইনি। আমি হত্যার বিচার চাই। ’
তিনি বলেন, ছেলের লাশ দাফন করে থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলবেন।
নাজমুলের ছোট ভাই নাফিজুল শাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত সোমবার একসাথে বাণিজ্য মেলায় ঘুরে বাসায় যাই। ভাইয়া পরে ফিরবে বলে আমাকে পাঠিয়ে দেয়। পরে খবর পাই সে তার বান্ধবীর বাসায় আত্মহত্যা করেছে। ভাইয়া আত্মহত্যা করতে পারে না। ভাইয়ার মৃত্যুর বিষয়ে তার বান্ধবী সবই জানেন। ’
গতকাল মঙ্গলবার ঘটনার পর সেজানের বান্ধবী হাসপাতালে পুলিশকে জানান, সেজান তাঁর খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। দুজনই বিভিন্ন প্রগ্রামে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে কাজ করতেন। সেজান মাঝে মাঝে তাঁদের বাসায় যেতেন। গত সোমবার সেজান, তাঁর ছোট ভাই নাফিজুলসহ বাণিজ্য মেলায় একসাথে ঘুরতে গিয়েছিলেন। পরে যাঁর যাঁর মতো চলে যান।
পরে মঙ্গলবার দুপুরে নাজমুল মুঠোফোনে জানান, পারিবারিক কিছু কথা আছে। পরে বাসায় আসেন নাজমুল। কথাবার্তা বলার আগেই তিনি তাঁর রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। সে সময় বান্ধবীর মা বাইরে ছিলেন। তিনি বাইরে থেকে এসে দরজা ধাক্কালে দরজা খুলতে গিয়ে দেখতে পান, সেজান ড্রইংরুমে ফ্যানের সাথে গামছা পেঁচানো অবস্থায় ঝুলছেন। পরে তাঁর মাসহ আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় নাজমুলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবার জানায়, সেজানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। তাঁর বাবার নাম সাইফুল আলম। নাজমুল বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকায় থাকতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সেজান ছিলেন বড়।