রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে তার প্রথম তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যে পুতিন আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের অজুহাত হিসেবে সংঘাতকে ব্যবহার করা।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে ন্যাটো জোটের বাহিনীর উপস্থিতি নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগ উপেক্ষা করছে।
মস্কোতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সঙ্গে আলোচনার পর পুতিন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এতটা উদ্বিগ্ন নয়…রাশিয়ার উন্নয়নকে আটকে রাখাই তার প্রধান উদ্দেশ্য।
মনে হয় ইউক্রেন এই মার্কিন লক্ষ্যে পৌঁছানোর একটি হাতিয়ার মাত্র। ’
ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রুশ সেনা মোতায়েনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রায় এক লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। এ ছাড়া ট্যাংক এবং কামান থেকে শুরু করে গোলাবারুদ, বিমানশক্তি- সব কিছুর সমাবেশ করা হয়েছে। কিন্তু রাশিয়া আক্রমণের পরিকল্পনা করার পশ্চিমা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
প্রায় আট বছর রাশিয়া ‘ঐতিহাসিক কারণ’ দেখিয়ে দক্ষিণ ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে নিজের সঙ্গে সংযুক্ত করে নিয়েছিল। এ ছাড়া দেশটির পূর্ব দনবাস অঞ্চলে এক রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহকেও রাশিয়া সমর্থন দিয়েছে।
মস্কো পাল্টা ইউক্রেন সরকারকে দেশটির পূর্বাঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করে। সেখানে গত কয়েক বছরে কমপক্ষে ১৪ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং রুশ সমর্থিত বিদ্রোহীরা বিশাল অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।
এই প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রাশিয়া আক্রমণ করলে তা শুধু ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে কোনো যুদ্ধ হবে না, হবে ইউরোপজুড়ে একটি পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ।
রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই শীতল যুদ্ধের (১৯৪৭-৮৯) আমল থেকে। দেশ দুটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের অধিকারী। ইউক্রেন আশির দশকের শেষ পর্যন্ত কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। রাশিয়ার পরেই ছিল তার গুরুত্ব। আর রাশিয়ান ফেডারেশনকে অনেক অর্থেই বিলুপ্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি মনে করা হয়।
পুতিন আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব দিকে ন্যাটোর আরো সম্প্রসারণ ঠেকানোসহ আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক সুরক্ষা নিশ্চয়তার জন্য রাশিয়ার দাবিগুলোর যে জবাব দিয়েছে, তাতে মস্কোর উদ্বেগকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
তিনি মন্তব্য করেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা অনুমোদিত হলে তা পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটটির অন্যান্য সদস্যকেও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে টেনে আনতে পারে।
‘ভাবুন তো, ইউক্রেন ন্যাটো সদস্য হলো এবং (ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের জন্য) একটি সামরিক অভিযান শুরু হলো। তাহলে কী আমরা ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের পথে যাব? কেউ কি এই বিষয়ে চিন্তা করেছেন? মনে হয় না। ’