বলিউডে যেভাবে এলেন সংগ্রামী লতা

লতা মঙ্গেশকর

সকাল ৮টা ১০ মিনিটে না ফেরার দেশে চলে গেলেন লতা মঙ্গেশকর। শুধু ভারত বা উপমহাদেশ নয়,এই কোকিলকণ্ঠীর বিদায়ে ব্যথা অনুভব করছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরের সুরের জগতে আবির্ভাবও ছিল গল্পময়, একটু অন্যরকম।

kalerkantho

কিশোরী লতা।

সে বয়সেই পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে তার কাঁধে।

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর! নেপথ্যের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নয়, তিনি নিজেই হাজির হয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে। বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন গোয়ালিয়র ঘরানার একজন শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও মঞ্চ অভিনেতা। তাঁর মিউজিক্যাল প্লেগুলোতে লতা প্রথম অভিনয় শুরু করেন।

১৯৪২ সাল,লতার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর। পুরো পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে ১৩ বছর বয়সী লতার উপর। পরিবারের বন্ধু ‘নবযুগ চিত্রপট চলচ্চিত্র কম্পানি’র মালিক মাস্টার বিনায়ক তখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মঙ্গেশকর পরিবারের পাশে।

kalerkantho

বোন আশা ভোঁসলের সঙ্গে লতা।

শৈশবের দিনগুলোতে মাঝেমধ্যে সিনেমায় গান করেছেন লতা তবে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে শিখিয়েছিলেন মাস্টার বিনায়ক। মারাঠি চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া গান ‘খেলু সারি মানি হাউস ভারি’ চলচ্চিত্রের ফাইনাল কাট থেকে বাদ পড়ে যায়। তবু হতাশ হননি লতা।

মাস্টার বিনায়ক তার চলচ্চিত্র ‘পেহলি মঙ্গলা-গৌর’ এ লতা মঙ্গেশকরের জন্য ছোট একটি চরিত্র বরাদ্দ করেন। এ চলচ্চিত্রে দাদা চান্দেকারের রচনায় গান ‘নাটালি চৈত্রাচি নাভালাল’-এ কণ্ঠ দেন তিনি। তখনও চলছে তার জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ। চলচ্চিত্রের জীবনকে কখনো আপন করে নিতে পারেননি তিনি। একদিন কাজ শেষে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরলেন। মাকে জানালেন কৃত্রিম অভিনয়ের জগত তার আর ভালো লাগে না। উপায় নেই, সংসার চলছে লতার উপার্জনে।

kalerkantho

লতা মঙ্গেশকর।

অবশেষে একটি মঙ্গলময় দিন এলো। ১৯৪৬ সালে বসন্ত যুগলকরের ‘আপ কি সেবা মে’ চলচ্চিত্রে ‘পা লাগু কার জোরি’ গানে কণ্ঠ দেন। বলিউডের মূলধারার ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের এটিই প্রথম গান। বিনায়ক মারা যাওয়ার পর গানের তালিম নেন গুলাম হায়দারের কাছ থেকে। গুলাম হায়দার হলেন লতার গুরু। তাঁর হাত ধরে লতার জীবনে সুযোগ এল ‘মজবুর’ (১৯৪৮) চলচ্চিত্রে ‘দিল মেরা তোড়া, মুঝে কাহি কা না ছোড়া’ গানটি গাওয়ার। এই গানেই বলিউড ইন্ডাস্ট্রি নতুন করে চিনল লতাকে।

kalerkantho

শেষ বয়সে লতা যেমন ছিলেন।

শুরুর গল্পগুলো এমনই ছিল লতার। তারপর লতা একসময় মহীরুহ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলেন নিজ আঙিনা থেকে গোটা ভারতে। হাজার গানে কণ্ঠ দিয়ে আপ্লুত করেছেন মানুষকে। পেয়েছেন অসংখ্য স্বীকৃতি, এসেছে অসংখ্য পুরষ্কার ও উপাধি। পঞ্চাশের দশকেই গান করে ফেললেন নামিদামি সব সংগীত পরিচালকদের সঙ্গে। পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে লতা গাইলেন ‘জিয়া বেকারার হ্যায়’, এই গান উতলা করে দিয়েছিলো শ্রোতামন। ১৯৫৫ সালে ‘মন দোলে মেরা তন দোলে’ দুলিয়েছিলো কোটি শ্রোতার হৃদয়। ৫৭-তে ‘আজারে পরদেশি’ গেয়ে যেন ডাক দিলেন দুনিয়ার সংগীত রসিকদের।

ষাটের দশকে উপহার দিলেন ‘পিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া’ বা ‘আজিব দাসতা হ্যায় ইয়ে’-এর মতো এখনো পর্যন্ত তুমুলভাবে বিখ্যাত সব গান। লতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতি দশকেই উপহার দিয়েছে তুমুল হিট গান। চল্লিশের দশক থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক—সমানভাবে লতা মাতিয়েছেন সুরের মূর্ছনায়। আজ রবিবার সকালে থেমে গেল সে সুর।

LEAVE A REPLY