শক্তি উৎপাদনের পথে বড় সাফল্য

টাংসেন, বেরিলিয়ামে তৈরি ‘জেট’ রিঅ্যাক্টরের দেয়াল

নিউক্লিয়ার ফিশন ও ফিউশন। পরমাণুবিষয়ক দুটি প্রক্রিয়া। ফিশন পরমাণুকে ভেঙে ফেলে আর ফিউশন অণু বা পরমাণুর সংযোগ ঘটায়। ফিশন প্রযুক্তিকেই কমবেশি সবাই পরমাণু প্রযুক্তি বলে চেনে।

গতকাল বুধবার এই ফিউশনকে কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপাদনে বড় সাফল্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফিউশন গবেষণা কর্মসূচি জয়েন্ট ইউরোপিয়ান ট্যুরসের (জেট) বিজ্ঞানীরা গতকাল দাবি করেছেন, তাঁরা হাইড্রোজেনের দুই আইসোটোপ (ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম) যুক্ত করে পাঁচ সেকেন্ড ধরে ৫৯ মেগাজুল শক্তি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। এটি ১৯৯৭ সালে উৎপাদিত শক্তির চেয়ে দ্বিগুণ।

হাইড্রোজেনের তিন ধরনের পরমাণু বা আইসোটোপ হলো হাইড্রোজেন, ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম। এদের মধ্যে ডিউটেরিয়াম ও ট্রিটিয়াম মিলে হিলিয়াম গ্যাস তৈরি হয়। সূর্যে অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রায় এই বিক্রিয়া ঘটে। সূর্যে এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত বিপুল শক্তিই আমরা পৃথিবীতে পাই।

সংশ্লিষ্ট ল্যাবের প্রধান গবেষক ড. জো মিলনেস উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, ‘জেট কর্মসূচির অভিজ্ঞতা আমাদের ফিউশন শক্তির পদক্ষেপের কাছে নিয়ে গেছে। বলতে পারেন, এত স্বল্পমাত্রার শক্তি এত স্বল্প সময়ব্যাপী ধরে রাখার গুরুত্ব কী? হ্যাঁ, এর ব্যাপক তাৎপর্য রয়েছে। ’

জো মিলনেস জানান, সূর্যে সংঘটিত বিক্রিয়ার মতো করেই তাঁরা গবেষণাগারে কাজটি করেছেন। এটি পরবর্তী সময়ে আরো দীর্ঘ সময় ধরে আরো বিপুল শক্তি উৎপাদনের পথ তৈরি করল।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমস্যা সমাধানে পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদনে ফিউশন প্রযুক্তিকে আশীর্বাদ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ফিশনে পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়া (চেইন রিঅ্যাকশন) হয় বলে সংঘটিত বিক্রিয়াকে আটকানো যায় না, কিন্তু ফিউশনে বিক্রিয়া থেমে যায়। সে জন্য এর নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি কম। সেই সঙ্গে শক্তি উৎপাদনও হয় অনেক গুণ বেশি। দুটির মূল পার্থক্যটি হলো, একটি শুরু করলে শেষ হয় না, অন্যটি শুরু করাই দুরূহ।

সূর্যের ভেতর এক কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই বিক্রিয়া হয়। তবে পৃথিবীতে বিক্রিয়াটির জন্য প্রয়োজন ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা। এত বিপুল তাপ পৃথিবীতে উৎপাদন করতে উচ্চ তাপমাত্রার প্লাজমা কণাকে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে আবদ্ধ করা হয়।

ফিউশন প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদনের এই কাজে এখন পর্যন্ত বড় গবেষণা প্রকল্প হচ্ছে ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর (ইটার)। প্রকল্পটি এই শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করছে। সূত্র : বিবিসি।

LEAVE A REPLY