জেমি সিডন্স : নিজের ভূমিকা জেনেই এই অস্ট্রেলিয়ান এসেছেন বাংলাদেশে। ফাইল ছবিঅ-অঅ+
তাঁকে যখন-তখন যেকোনো দায়িত্বে কাজে লাগানোর সুযোগ যদিও উন্মুক্ত রেখেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তবে চুক্তিপত্রে কিন্তু জেমি সিডন্সের ভূমিকা নির্দিষ্ট করাই আছে। যেখানে লেখা আছে যে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবেই কাজ করতে হবে এই অস্ট্রেলিয়ানকে।
গত নভেম্বরের শেষ দিকে তাঁর সঙ্গে এভাবেই কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছে দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসনের একটি সূত্রও।
অথচ এর প্রায় দুই মাস পর বাংলাদেশ দলের সাবেক হেড কোচ ঢাকায় চলে এলেও তাঁর ভূমিকা ঠিক করা নিয়ে আরো কয়েক দিন অপেক্ষার কথাই বলে আসা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে। চাইলে সে অপেক্ষার পেছনে অন্য কিছু কেউ অনুমান করে থাকলেও এখন আর তা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। বিপিএলের সিলেট পর্ব শুরুর আগের দিন গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের বক্তব্য থেকেও দুয়ে দুয়ে চার মেলাতে পারেন যে কেউ। আসন্ন আফগানিস্তান সিরিজে সিডন্সকে জাতীয় দলের দায়িত্বে দেখা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনিও সেদিন আরেকটু অপেক্ষার কথাই বলেছিলেন, ‘এটি ঠিক করতে আর দু-একটা দিন সময় লাগবে আমাদের। ’
তা ঠিক হতে দুই দিন নয়, লেগেছে তিন দিন। ৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব নেওয়া অ্যাশওয়েল প্রিন্স। আফগানিস্তান সিরিজের আগে তিনি ঢাকায় ফিরলে এই প্রোটিয়া আর সিডন্সের সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁদের ভূমিকা নির্দিষ্ট করার কথাই এত দিন বলে এসেছেন জালালও। হুট করে প্রিন্সের পদত্যাগ নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে বিস্ময় প্রকাশ করলেও ভেতরের ছবিটা এ রকম যে নয়, সে খবরও মিলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোর্ড পরিচালক যেমন বলেছেন, ‘জেমি ছেলেদের জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হয়েই ঢাকায় এসেছেন। এই পদে কাজ করতে সম্মত হয়েই তিনি চুক্তিতে সই করেছেন। হ্যাঁ, আমরা যে তাঁকে অন্য কোনো অ্যাসাইনমেন্টও দিতে পারি, সেটিও উল্লেখ করা আছে চুক্তিতে। হতে পারে পরবর্তী সময় অন্য কোনো দলের সঙ্গেও আমরা তাঁকে সম্পৃক্ত করতে পারি। চুক্তি অনুযায়ী সে দায়িত্ব পালনেও তিনি বাধ্য থাকবেন। তবে এখন পর্যন্ত তাঁর মূল কাজ জাতীয় দলের ব্যাটিংটা দেখাই। ’
তাহলে এত দিন ‘আলোচনা করে ঠিক করা’র যে কথা বলা হলো, সেসব তাহলে নাটক ছিল? বিসিবি তাহলে প্রিন্সের নিজে থেকেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার অপেক্ষায়ই ছিল? এসব প্রশ্নে অবশ্য ওই পরিচালকের নীরবতাই যা বলার বলে দিচ্ছে। যদিও এখন ঘটা করেই সিডন্সকে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ করার ঘোষণা সংবাদমাধ্যমে দিতে শুরু করেছেন বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউ কেউ। সে জন্য ‘অনুকূল’ সময়ের অপেক্ষায়ও ছিলেন তাঁরা। প্রিন্সের পদত্যাগে যে এখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণায়ও আর কোনো বাধা নেই। অবশ্য কোচ বিদায়ের এই ছকটা পুরনোই। সহকারী থেকে একসময় জাতীয় দলের হেড কোচ হওয়া শেন জার্গেনসেনকেও নিজে থেকে পদত্যাগের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করার কথা পরে সংবাদমাধ্যমেও বলতে শোনা গেছে খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে। এবার সিডন্সকে জাতীয় দলের দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা পরিস্থিতি একই রকম নাজুক করে তুলেছিল প্রিন্সের জন্যও। অন্যদিকে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হয়েই আসা সিডন্সও নিজের ভূমিকা নিয়ে নীরবতাই অবলম্বন করে এসেছেন। যাঁর সঙ্গে বিসিবির ২২ মাসের চুক্তি ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত। এই অস্ট্রেলিয়ানের বেতন প্রতি মাসে ১৭ হাজার ইউএস ডলার বলেও জানা গেছে। এর সঙ্গে বড় অঙ্কের বাড়তি খরচও আছে বিসিবির। কারণ সিডন্সের প্রদেয় করও পরিশোধ করার কথা তাঁদেরই!