আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে এবার সরব হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বিরোধীরা। তারা বর্তমান এই তুর্কি প্রেসিডেন্টকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। ইকোনোমিক টাইমসে লেখা ডেভিড গার্ডনেরার একটি বিশেষ নিবন্ধে এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, তুরস্কে রাজনৈতিক বড় কোনো প্রতিপক্ষ না থাকলেও সম্প্রতি এরদোয়ানের রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর মধ্যে অন্যতম মুদ্রাস্ফীতি। গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ৫০ শতাংশে দাঁড়ায়। যেটি তার শাসনকালে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। এটিকে সুযোগ হিসেবে নিচ্ছে বিরোধীরা। বলা হয়েছে, এরদোয়ান বিরোধী শক্তি যতই ভঙ্গুর হোক না কেন তারা নেতিবাচক অর্থনীতির বিষয়টি জনগণের সামনে আনার চেষ্টা করছে। তারা এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে আগামী নির্বাচনে তুরস্কের দীর্ঘদিনের একনায়ক এরদোয়ানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) জন্য আগামী নির্বাচনে কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিষয়গুলো নিয়ে এরদোয়ান যে ভাবছেন না তা নয়। সম্প্রতি তিনি তুরস্কের পরিসংখ্যান ইন্সটিটিউটের প্রধানকে বরখাস্ত করেছেন। মুদ্রানীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। তাতেও খুব একটা লাভ হয়নি। খাদ্য ও জ্বালানির দাম এখনও আকাশচুম্বী। যেটি ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) জন্য আগামী নির্বাচনে কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডেভিড গার্ডনেরা আরও লিখেছেন, রাশিয়ার আদলে তুরস্কে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে অসীম ক্ষমতা দেওয়া হয়। সীমাহীন ক্ষমতা পেয়ে এরদোয়ান বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তিনি একেপির সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের কোনঠাঁসা করে রেখেছেন। দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের মূল্যহীন করে রেখেছেন। এরদোয়ানের রাষ্ট্রনীতি ও রাজনীতিতে ভুল ধরবে এমন কোনো সমালোচককে আশপাশে রাখেননি তিনি।
এরইমধ্যে গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর ১০ জন রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন এরদোয়ান। যেটি ন্যাটোভূক্ত তুরস্ককে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পশ্চিমা দেশগুলোর হুমকির মুখে পড়েছে তুরস্ক। কিন্তু এরদোয়ান মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে পারেননি। মুদ্রাস্ফীতি কমানোর বদলে সুদের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে লিরার দরপতন কমেনি।
এসব কারণে এরদোয়ান শাসনের বিরোধীরা এবার আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। এরদোয়ানকে ফেলে দিতে এবং তুরস্কে নিজস্ব স্টাইলে সংসদীয় গণতন্ত্র পূণরায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন তারা। বলা হচ্ছে, বিরোধীরা একজোট হয়ে একজন যোগ্য প্রার্থী দাঁড় করাতে পারলে এরদোয়ানের পতন অনিবার্য বলে মনে করছেন তুরস্কের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।