গায়েব হওয়া রায়ের হদিস পেতে হাইকোর্টের রুল

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী।

নব্বইয়ের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার বিচারকাজে স্থগিতাদেশ তুলে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের নথি গায়েবে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এসংক্রান্ত এক রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুল জারি করেছেন।

রুলে নথি হারানোর ঘটনা যথাযথ তদন্তে বিবাদীদের অযৌক্তিক সময়ক্ষেপণ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং কেন নথি হারানোর ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। আইনসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ ছয় বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নথি গায়েবের বিষয়ে তদন্ত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার নির্দেশনা চেয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া। রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

শুনানিতে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া বলেন, এখন পর্যন্ত নিম্ন আদালতে হাইকোর্টের রায়ের নথি পৌঁছয়নি। নথিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এটির তদন্ত হওয়া দরকার। তখন আদালত জানতে চান নথি কোথা থেকে হারিয়েছে? আইনজীবী বলেন, পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নথি পাওয়া যায়নি। তখন আদালত রুল জারি করেন।

এই আইনজীবী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পত্রিকায় প্রতিবেদন দেখে জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেছি। তার আগে বিবাদীদের আইন নোটিশ পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো জবাব পাইনি। ‘

রিট আবেদনটি কী অর্থে ‘জনস্বার্থে’ বলা হচ্ছে, জানতে চাইলে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হারুন ভূঁইয়া বলেন, ‘নথি হারানো বা গায়েব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যে প্রতিবেদন হয়েছে, তাতে আমাদের আইনি বিধি-বিধান এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের মধ্যে একধরনের আস্থার সংকট তৈরি হতে পারে। এ রকম যাতে কিছু না হয় সে জন্যই এই রিট মামলাটি করা। আর এই অর্থে আবেদনটিকে জনস্বার্থের মামলা বলছি। ‘ 

রিট আবেদনের আগে ৩০ জানুয়ারি বিবাদীদের কাছে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। রেজেস্ট্রি ডাকে নোটিশটি পঠান আইনজীবী আবু জোবায়ের হোসাইন সজিব। নথি গায়েবের বিষয়ে তদন্তের পদক্ষেপ নিতে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বিবাদীদের কাছ থেকে কোনো জবাব না আসায় রিট আবেদন করা হয়।  

গত ২৩ জানুয়ারি একটি দৈনিকে প্রকাশিত এসংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করা হয় রিটে। ‘নায়ক খুনের মামলা গুম’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর বনানীর ক্লাব ট্রামসের নিচে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ডিবি পুলিশ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ওই মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। পরে বিচারের জন্য পাঠানো হয় ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকি ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন।

পরে রুল শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে রুলটি খারিজ করে দেওয়া হয়। প্রত্যাহার করা হয় হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশও। কিন্তু সেই রায় আর নিম্ন আদালতে পৌঁছয়নি। সেই মামলার নথিও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

LEAVE A REPLY