এই মুহূর্তে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে। যেকোনও যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে এই দুই দেশের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য হওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এতে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে রাশিয়া।
ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়া যতই আপত্তি করুক, তার দেশ ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা কখনওই ত্যাগ করবে না।বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টি ইউক্রেনের জন্য বাঁচা-মরা এবং স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার প্রশ্ন, এটি কেবল একটি আকাঙ্ক্ষাই নয়।
সেই সঙ্গে ন্যাটোর সদস্যপদ প্রশ্নে কোনও ধরনের আপোসের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার প্রশ্ন এর সঙ্গে জড়িত।
“আমাদের ১৫ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এটা কোনও আকাঙ্ক্ষা নয়,” জেলেনস্কি বলেন।
তিনি আরও বলে, “এটা কেবল ন্যাটোর ব্যাপার নয়, এটা জনগণের ভবিষ্যতের প্রশ্ন। ইউক্রেনের জন্য এটা কোনও আকাঙ্ক্ষার প্রশ্ন নয়, এটা তাদের জন্য বেঁচে থাকার প্রশ্ন।”
জেলেনস্কি বলেন, “এটা শুধু ন্যাটোর সদস্যপদ পাবার বিষয় নয়, আমরা যখন নেটোর সদস্যপদ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা সাময়িকভাবে বেদখল হয়ে যাওয়া সীমানা নিয়ে কথা বলি, আমরা আসলে আমাদের স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বলি।”
“আমরা কী চাই, আমরা ভবিষ্যতে কী করব, সে বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,” যোগ করেন জেলেনস্কি।
তিনি স্বীকার করেন যে, ন্যঅটো জোটে কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পথ অনেক দীর্ঘ, কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব এই পথে যেন তারা তাদের দেশকে হারিয়ে না ফেলেন, সেটা দেখা।
ন্যাটোর সদস্যপদ প্রশ্নে কোন জাতীয় গণভোটের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়টি ইউক্রেনের জাতীয় সংবিধানেই অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে, ন্যাটো জোট পূর্ব ইউরোপে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের কথা ঘোষণা করার পর এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
তিনি বলেছেন, ন্যাটো এখন সেই কাজই করছে, যেটার জন্য তারা এতদিন ধরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ন্যাটো জোট এখন একটি সীমা অতিক্রম করেছে।
“রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সহ নেটো জোটের কাছে যেসব নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাইছে, সে ব্যাপারে তিনি বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি চিঠি পাঠাবেন। এই চিঠি পরে প্রকাশ করা হবে, “ সের্গেই লাভরভ জানান।
ন্যাটোর বিবৃতির উল্লেখ করে লাভরভ বলেন, “তাদের বিবৃতির সবচেয়ে মুখরোচক অংশ হল বিবৃতি যেভাবে শুরু করা হয়েছে: ‘ইউক্রেনের ভেতরে ও চারপাশে এবং বেলারুসে রাশিয়া বিনা উস্কানিতে এবং অন্যায্যভাবে যেরকম বিপুল সামরিক সম্ভার প্রস্তুত করেছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
“এই বক্তব্য শুনে আপনার কী মনে হবে? দেখুন আমিই শ্রেষ্ঠ এবং আমি কখনওই ভুল করতে পারি না এই ধারণা তুলে ধরে- আমি বলব – তারা ইতোমধ্যেই সীমা অতিক্রম করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, ন্যাটো জোটে আমাদের সহকর্মীরা এটা দেখতে পাচ্ছেন না,” বলেন. লাভরভ।
রাশিয়া এমন নিশ্চয়তা চাইছে, ইউক্রেন যেন কখনওই ন্যাটো জোটের সদস্য হতে না পারে, কিন্তু ন্যাটো বলছে, কারা কোন নিরাপত্তা জোটে যোগ দেবে, প্রত্যেকটা দেশের সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার থাকা উচিৎ। সূত্র: বিবিসি