সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে ফেরদৌসী রহমানের স্মৃতিচারণা

ফেরদৌসী রহমান

আমার আব্বা খুব ভক্ত ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের। গানের নতুন রেকর্ড বাজারে এলেই আব্বা সেটা বাসায় নিয়ে আসতেন। বাবা দুটি উদ্দেশ্যে এই রেকর্ডগুলো নিয়ে আসতেন। প্রথমত, বাবা বলতে গেলে তাঁর পাগলের মতো ভক্ত ছিলেন।

দ্বিতীয়ত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গানগুলো খুব কঠিন, এখনকার বাংলা গানের মতো সহজ-সরল নয়। আব্বা রেকর্ড এনেই আমার হাতে দিয়ে বলতেন, ‘এগুলো গলায় তোলো। ’ এক প্রকার চ্যালেঞ্জই তিনি ছুড়ে দিতেন আমার দিকে। আমি কষ্ট করে সেসব গলায় তুলতাম। সন্ধ্যার গান গলায় তুললে গলাটা অনেকটা ফ্লেক্সিবল হয়ে যায়।

আব্বা এটাই বলতেন, আর চাইতেন আমি যেন সন্ধ্যার গান গলায় তুলে গেয়ে শোনাতে পারি। এভাবেই সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সব গান আমার কণ্ঠে তোলা হয়ে যায়। তাঁর এমন কোনো গান নেই যে আমার গলায় তোলা নেই।

আমি যখন টুকটাক করে সিনেমায় গাইতে শুরু করলাম, তখন সেটা কাজে দিয়েছে। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে কখনো নকল করতে চাইতাম না, তবে সত্যি হলো যে তাঁকে আমি ফলো করতাম। আজ তিনি নেই, খুব খারাপ লাগছে।

১৯৭৩ সালে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনার এক অনুষ্ঠানে। একই মঞ্চে আমরা গেয়েছি, তবে কথা হয়নি। যেটা হয়, প্রথমে ছোট শিল্পীরা গায়, তারপর বড় শিল্পীরা গায়। কিন্তু চব্বিশ পরগনায় প্রথম গাইলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, তারপর চলে গেলেন। কথা হলো না, যদিও আমি যেচে গিয়ে আলাপ করতে পারি না, তবু একটু খারাপ লাগা ছিল।

তবে সেটা খুব অল্পদিনের মতোই। কারণ কিছুদিন পরে কলকাতায় রবীন্দ্র সদনে দেখা হয়ে গেল। প্রথম দিন হেমন্ত, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় গাইলেন। তাঁর গাওয়া শেষে অনেক কথা হলো। ওই গান নিয়ে। আমার সেদিন গান ছিল না। পরের দিন দেবব্রত বিশ্বাস গাইলেন এক ঘণ্টা, আমি গাইলাম এক ঘণ্টা।

আসলে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যেসব গান গেয়েছেন, তা ছোট-বড় সব বয়সীদের মনে দোলা দেয়। তাঁর মতো একজন শিল্পীকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। তিনি শুধু বাংলা ভাষার নন, উপমহাদেশের সব ভাষার শিল্পীদের অন্যতম একজন কণ্ঠশিল্পী।

উচ্চাঙ্গ, গজল—সব ধরনের গানে সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। আমার সঙ্গে যে কয়েকবার কথা হয়েছে, উনি সামনাসামনি আমার প্রশংসা করেননি। কিন্তু শুনেছি, টেলিভিশনের এক সাক্ষাৎকারে উনি আমাকে নিয়ে বলেছেন, ‘ফেরদৌসী তো উচ্চাঙ্গ ভালো গায়, আধুনিক ভালো গায়’—এমন সব প্রশংসা।

অনুলিখন : মাহতাব হোসেন

LEAVE A REPLY