ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ইউনিস; ঘণ্টায় ১২২ মাইল গতিতে ব্রিটেনে আঘাত

ঘূর্ণিঝড় ইউনিসের জন্য যেমন ব্যাপক আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তেমনি মানুষের মৃত্যু ও আহত হওয়ার সংবাদও এসেছে। ব্রিটেনে ৪ জনসহ ইউরোপের আরো বিভিন্ন দেশে ঘূর্ণিঝড় ইউনিসের কারণে মৃত্যু হয়েছে অন্তত আরো ৫ জনের। সব মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ জন।

যুক্তরাজ্যে যে ৪ জন মারা গেছেন কাকতালীয় ভাবে তাদের তিনজনই গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে ছিলেন। এই ৩ জনের সাথে যারা ড্রাইভার বা গাড়ির চালক ছিলেন প্রত্যেকেই কাকতালীয় ভাবে জীবন রক্ষা পেয়েছে। তবে তারাও বেশ আহত হয়েছিলেন।আয়ারল্যাণ্ডের ওয়াক্সফোর্ড এলাকায় ৬০ বছরের একজন পুরুষ গাড়ির প্যাসেঞ্জার সিটে বসা ছিলেন। সকাল ১১টা ৩৯ মিনিটে হঠাৎ করে ঝড়ে একটি গাছের বড় ডাল সরাসরি সেই ব্যক্তির উপরে গিয়ে আঘাত হানে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এই ব্যক্তি স্থানীয় কাউন্সিলে চাকরি করেন। এসময় তিনি পড়ে যাওয়া আরেকটি গাছ দেখতে যাচ্ছিলেন।

এরপরে খবর আসে মারসিসাইড এলাকায় ৫০ বছরের এক ব্যক্তি গাড়িতে ছিলেন, ঝড়ের সময় গাছের একটি ডাল ভেঙে তার গাড়ির উপর পড়ে, সেখান থেকে এক্সিডেন্টের কারণেই মৃত্যু হয় তার।

দ্বিতীয় ব্যক্তিও মার্সেডিজ গাড়িতে বসা ছিলেন, তার বয়স ২০ বছর। হ্যাম্পশায়ার এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে তার সাথের গাড়ির চালক প্রাণে বেঁচে গেছেন।

এদিকে উত্তর লণ্ডনে মারা যাওয়া ৩০ বছরের নারীর মৃত্যুও হয়েছে একইভাবে। পুরুষ সঙ্গী গাড়ি চালাচ্ছিলেন, হাইগেট উড এলাকায় যাওয়ার পরই গাড়ির উপর গাছ ভেঙে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই সেই নারী মারা যান। ফায়ার ব্রিগেড এসে গাছ ও গাড়ি কেটে দুজনকে উদ্ধার করলেও সেই নারীকে মৃত উদ্ধার করে। তবে পুরুষ সঙ্গী মারাত্মক আহত থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা টয়োটা পিয়ার্সে বসা ছিলেন।

এদিকে ইউরোপের বেলজিয়ামে মারা যাওয়া ব্যক্তি ব্রিটিশ নাগরিক। সেই সাথে আরো ৩ জন নেদারল্যান্ডে মারা গেছেন।

এদিকে ঝড়ে অন্তত ৬৫ টি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে শুধুমাত্র হিথ্রো বিমানবন্দরে। ঝড়ের তাণ্ডবের সময় যেসব ফ্লাইট নেমেছে ও উঠেছে সেগুলো মারাত্মক ভাবে দুলছিলো। সিটি এয়ারপোর্টের বেশিরভাগ ফ্লাইট বাতিল করা হয়।

আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইস কুপার প্রাইস তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির একটি ধারণা করেছে। তারা বলছে, সারা দেশে গাড়ি দুর্ঘটনা, বাড়ি ঘরের ছাদ উড়িয়ে নেয়া, রাস্তাঘাটের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড সমপরিমাণ হতে পারে। তবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়লেও পারে বলে তাদের ধারণা।

ইস্ট সাসেক্স পুলিশ জানিয়েছে অন্তত ১০০ গাছ পতিত হয়েছে তাদের এলাকায়। এদিকে সারা দেশে জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ অন্তত ১৪০০ কল গিয়েছে জরুরি সহায়তা চেয়ে। এর বেশিরভাগ কল ছিলো লন্ডন থেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে লন্ডনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

লন্ডনের সাথে যুক্ত অন্তত ৭টি ট্রেন লাইন বাতিল করা হয় ঝড়ের তাণ্ডবে। যুক্তরাজ্যে ১২২ মাইল প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বাতাস রেকর্ড করা হয় আইল অব ওয়াইটে। যা ১৯৭৯ সালের পর সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯ সালে সর্বশেষ কর্ণওয়ালে ১১৮ মাইল প্রতিঘণ্টায় বাতাস রেকর্ড করা হয়। ১৯৯০ সালের পর সবচেয়ে ভয়ংকর ঝড়ের কবলে পড়েছিলো ইংল্যান্ডসহ ব্রিটেন।

LEAVE A REPLY