গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত জানুয়ারিতে ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়। ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে সকল জেব্রার মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২ ও ৩ জানুয়ারি তিনটি জেব্রার মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাতজনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারালো কিছু দ্বারা কাটা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। কে বা কারা মৃত তিনটি জেব্রার পেট কেটেছে তা উদঘাটন করার জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করবেন মর্মে বিধান থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরিভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি। যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল। কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি, যা রহস্যজনক।
আজ মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দায়ীদের সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিতপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হবে। এ ছাড়া তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত ২৪টি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
সভায় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মো. মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, মো. মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) কেয়া খান এবং উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আলোচনা হয়, মন্ত্রণালয়ের সচিব গত ২২ জানুয়ারি সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেন। ওই পর্যন্ত ৮টি জেব্রা মারা গেলেও প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ভেটেরিনারি কর্মকর্তা বা কর্মরত অন্য কেউ জেব্রার মৃত্যুর ঘটনাটি অবহিত করেননি। এতে প্রতীয়মান হয় প্রথম থেকেই জেব্রা মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি অস্বাভাবিক, অগ্রহণযোগ্য ও সরকারি কর্মচারী আচরণের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, যা দায়িত্ব অবহেলার শামিল। তদন্ত কমিটির এসকল মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিতপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ফৌজদারী মামলা ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক, গাজীপুরের প্রাণী মৃত্যুরোধ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য করণীয় বিষয়ে তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত ১১ টি স্বল্পমেয়াদী, ৪টি মধ্য-মেয়াদী এবং ৯টি দীর্ঘ মেয়াদি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মন্ত্রণালয়।