তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিতের উদ্যোগ

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ভূমি মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে এ সম্পর্কিত খসড়া প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে। আজ বুধবার ‘২০টি শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি ভবনে স্থাপিত মডেল ‘শিশু দিবা যত্ন কেন্দ্রের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

এ ছাড়া অতিথি ছিলেন ভূমিসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

সাইফুজামান চৌধুরী বলেন, দেশে সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে পৃথক আইন বলবৎ থাকলেও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা পুরুষ অথবা নারী হিসেবে পরিচিতি নির্ধারিত না থাকায় সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে তারা নিগৃহীত হচ্ছেন, কেউ কেউ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবিকা অর্জনের তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তির আশ্রয় নিচ্ছেন। যার ফলে সমাজে অসাম্য ও বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট অনুশাসন আছে।

মন্ত্রী বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো প্রস্তাবনায় তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকগণের পুরুষবাচকতা অথবা নারীবাচকতা নির্ধারণের পর চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে তাদের সম্পদের উত্তরাধিকার অর্জন করার কথা বলা হয়েছে। লিঙ্গের পুরুষবাচকতা অথবা নারীবাচকতা নির্ধারণ করা সম্ভব না হলে নারী ও পুরুষ উত্তরাধিকারের পরিমাণ যোগ করে এর অর্ধেক সম্পত্তির উত্তরাধিকার করা যেতে পারে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে। এসব প্রস্তাবনা পরে সকলের মতামত গ্রহণ করে সংশোধন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী এ সময় জানান।

ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান সোলেমান খান, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন, ‘২০টি শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক শবনম মোস্তারীসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও আওতাভুক্ত দপ্তর-সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ভূমি ভবনে স্থাপিত অত্যাধুনিক মডেল শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রটিতে শিশু নিরাপত্তার সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘ডে কেয়ার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার’-এর মাধ্যমে অভিজ্ঞ কেয়ারগিভারদের মাধ্যমে কেয়ার সেন্টারটি পরিচালনা করা হবে। মন্ত্রী আজ এই সফটওয়্যার সিস্টেমটিও উদ্বোধন করেন। ভূমি ভবনে স্থাপিত প্রায় চার হাজার বর্গফুট আয়তনের এ শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রে ৬০টি শিশুকে সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রাখার সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রে শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, সকাল-বিকালের নাশতা ও দুপুরের খাবার দেওয়া হবে। শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্রটিতে রয়েছে শিশুদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুবিধা।

কর্মজীবী নারীরা যেন পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রের দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিন্তে এবং মনোযোগ সহকারে কাজ করতে পারে সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। ‘২০টি শিশু দিবা-যত্ন কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পটি ‘মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে’র আওতাভুক্ত ‘মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের’ আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

কর্মজীবী নারীদের চার মাস থেকে ছয় ছয় বছর বয়সী শিশুদের দিবাকালীন নিরাপদ সেবা প্রদান করা এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য লক্ষ্যের মধ্য অন্যতম হচ্ছে শিশুর দিবাকালীন সাধারণ যত্ন নিশ্চিত করা, শিশুর খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান এবং শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা।

LEAVE A REPLY