মা রাজিয়ার সঙ্গে ছেলে নিজামউদ্দিন। পুরনো ছবি।
২০২০ সালের মার্চ মাসের ঘটনা। ভারতে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। বাড়ি থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে আটকে পড়া ছেলেকে নিয়ে আসতে একাই স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন রাজিয়া বেগম। অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ছেলেকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়েও গিয়েছিলেন তিনি।
তাঁর এই কাজের জন্য গণমাধ্যমের সংবাদেরও শিরোনাম হয়েছিলেন। তাঁর সাহসিকতা এবং জেদের জন্য কুড়িয়েছিলেন অনেক প্রশংসা।
আবারো সেই মার্চ মাস। সেই ঘটনার প্রায় দুই বছর পর এবারও আটকে পড়েছে ছেলে। কিন্তু এবার আর প্রতিবেশী রাজ্য বা ভারতের অন্য কোনো প্রান্তে নয়। সুদূর ইউক্রেনে।
দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে তিনি ১৪০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন; সুদূর ইউরোপের দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে এবার আর দুই চাকার বাহন নয়, ভরসা করতে হচ্ছে ভারত সরকারের।
তেলাঙ্গানার নিজামাবাদের বাসিন্দা রাজিয়া। তিন সন্তান তাঁর। পেশায় সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা তিনি। ২০২০ সালে করোনার জেরে যখন লকডাউন ঘোষণা হয় সারা ভারতে, সে সময় তাঁর ছেলে মুহম্মদ নিজামউদ্দিন বন্ধুকে রাখতে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে গিয়েছিলেন। সেখানে থাকাকালীন লকডাউন ঘোষণা হয়। যানবাহন, ট্রেন সব কিছুই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মায়ের মন বাধ মানছিল না। তাই নিজেই স্কুটি নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ৭০০ কিলোমিটার পথ।
এবার প্রেক্ষিতটা সম্পূর্ণ আলাদা। ছেলে নিজামউদ্দিন ডাক্তারি পড়ার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন ইউক্রেনে। সেখানে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর সুমি স্টেট মেডিক্যাল কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্র নিজামউদ্দিন।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হতেই চরম দুর্ভাবনায় দিন কাটে রাজিয়ার। কিয়েভ, খারকিভ-সহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর থেকে ভারতীয়রা প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া এবং হাঙ্গেরিতে রওনা দিয়েছে। সেখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে ভারত সরকার। কিন্তু ছেলে নিজামউদ্দিন কিভাবে ফিরবেন, সেখানে কী অবস্থায় আছে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাজিয়া।
রাজিয়া বলেন, ছেলে একটি বাঙ্কারে আশ্রয় নিয়েছে। আমাকে চিন্তা করতে নিষেধ করছে। কিন্তু মায়ের মন তো! বার বার দুশ্চিন্তায় কেঁপে উঠছি।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী উহম্মদ মাহমুদের কাছে ছেলেকে উদ্ধারের আর্জি জানিয়েছেন রাজিয়া।
সূত্র: আনন্দবাজার।