রাশিয়ায় প্রতিবাদের সাংকেতিক ভাষা

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু করার সময় একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ছবিটির মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার খ্যাতনামা কবি পুশকিনের মুখাবয়ব, ৭ অঙ্কটি এবং হেঁটে চলা কয়েক সারি ব্যক্তির ইমোজি।  

যারা রাশিয়ার বিষয়ে ওয়াকিবহাল তাদের কাছে এর অর্থটি ছিল স্পষ্ট। মস্কোতে পুশকিন স্কয়ারে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান।

মানবাধিকার গ্রুপ ওভিডি-ইনফো অনুসারে, ইমোজিগুলো রাশিয়ায় বছরের পর বছর ধরে প্রতিবাদের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কর্তৃপক্ষের কাছে এটি এতই পরিচিত যে আর কোডও বলা যায় না।  

২০১৪ সাল থেকে রাশিয়ায় অননুমোদিত প্রতিবাদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিধান লঙ্ঘন করলে প্রথম অপরাধের জন্য ১৫ দিন পর্যন্ত আটক থাকতে হতে পারে। বারবার ভঙ্গ করলে হতে পারে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।  

এর পর থেকে রাশিয়ায় আন্দোলনকর্মীদের অনলাইনে সংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন কোডেড বাক্যাংশ ব্যবহার করা সাধারণ অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মারিয়া বলেন, ভাষাগুলো থাকে এ রকম : ‘চলো, শহর কেন্দ্রে হাঁটতে যাই’ বা ‘হাঁটার জন্য আবহাওয়াটা দারুণ’। বন্ধুরা এ মেসেজ পেলে বুঝবে সে কোনো প্রতিবাদে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছে।  

মারিয়া বিবিসি নিউজকে বলেন, সরকারি সেন্সর এড়াতে যা শুরু হয়েছিল তা প্রায় একটি রসিকতা বা মিমে পরিণত হয়েছে।

তবে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার না করার পরিণতি গুরুতর হতে পারে। যেমন আলেকজান্ডার নামের এক যুবক মস্কোতে একটি বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পর এ সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে তার প্রেমিকার বাসার বাইরে থেকে তুলে স্থানীয় থানায় নিয়ে যায়।  

আলেকজান্ডারকে বেশ কয়েক দিন আটক রাখা হয়। কর্তৃপক্ষের কথামতো নানা ধরনের বেআইনি কাজের ফিরিস্তি দেওয়া একটি নথিতে স্বাক্ষর করতে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল। প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বা সোশ্যাল মিডিয়ার কার্যকলাপের কারণেই আলেকজান্ডারকে আটক করা হয়েছিল কিনা বিবিসি এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি। পরে তাকে আরেকবার গ্রেপ্তার করা হয় মস্কো মেট্রোতে যাতায়াত করার সময়। তবে সেদিন তিনি কোনো প্রতিবাদে যোগ দেননি।

বিবিসি নিউজ শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে আরো লোককে আটকের কথা জানতে পেরেছে। এর মধ্যে একজন নারীকে একটি টুইট করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  

২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি পোস্ট করেছিলেন : ‘অনেক দিন ধরে শহরকেন্দ্রে হাঁটি না। ’ সেই সঙ্গে অন্য একটি অ্যাকাউন্টের টুইট উদ্ধৃত করেছিলেন, যাতে আরো স্পষ্টভাবে সমাবেশের আহ্বান জানানো হয়েছিল।  
সূত্র : বিবিসি।

LEAVE A REPLY