ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহে উত্তাপ

    রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী রাশিয়ার সেনাদের রুখে দিচ্ছে। শনিবার দেশটিতে আরও প্রায় ২০ কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহের বহরে হামলার হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকোভ। পালটা হুমকি দিয়ে পশ্চিমা মিত্র পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুদা বলেছেন, এমন হামলা হলে রাতারাতি যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাবে।

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামলা চালালে রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে। এদিকে রাশিয়ার হুমকির পরপরই রোববার পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের লভিভ শহরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে পরপর ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত ৩৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। ওই শহর হয়েই ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের পাঠানো মানবিক ও সামরিক সহায়তা আসছে। খারকিভ, চেহেরনিভ, সুমি ও মারিউপোলের মতো শহরগুলো ঘিরে রেখেছে রুশ বাহিনী। রাজধানী কিয়েভের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছে তারা।

    শহরগুলোতে ব্যাপক বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। এতে বেসামরিক নাগরিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের বাড়িঘর তছনছ হয়ে যাচ্ছে। অনেক এলাকার বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনিয়রা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। আমাদের সবাইকে হত্যা করেই কিয়েভ দখলে নিতে হবে। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এএফপিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের।

    শনিবার রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকোভ বলেছেন, বিভিন্ন দেশ থেকে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো হচ্ছে। এটা খুবই বিপজ্জনক। আমরা তা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছি। সতর্ক করা হয়েছে-অস্ত্র সরবরাহের ফল ভালো হবে না। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সেনাদের কাঁধে বহনযোগ্য আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে পশ্চিমারা। ভবিষ্যতে তাদের অস্ত্রের বহর রুশ হামলার ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হতে পারে।

    তবে ওয়াশিংটন এ সতর্কতা খুব একটা আমলে নেয়নি বলেই মনে হচ্ছে। রুশ সেনাদের প্রতিহত করতে পশ্চিমাদের কাছে অস্ত্র সহায়তা চেয়ে বারবার আবেদন করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এতে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশ ইউক্রেনকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম জোগান দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউক্রেনে ৩৫ কোটি ডলারের অস্ত্র দিয়েছে। আরও প্রায় ২০ কোটি ডলারের অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। শনিবারই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে এ অস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দেন। এই সহায়তা প্যাকেজে প্রতিরক্ষামূলক যন্ত্রপাতি, যেমন-সাঁজোয়া যান, আকাশ প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য হুমকি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সবকিছুই রাখা হয়েছে।

    ইউক্রেনে রাশিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করলে চলমান সংঘাতে সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ না করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা পুনর্বিবেচনা করতে পারে ন্যাটো। রোববার পশ্চিমাদের এই সামরিক জোটের সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডা এমন মন্তব্য করেন। অন্যদিকে জো বাইডেন বলেছেন, এ ধরনের হামলা হলে রাশিয়াকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

    পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা : রোববার ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভের বাইরে একটি সামরিক ঘাঁটিতে অন্তত ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। লভিভ থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের এ সামরিক ঘাঁটিতে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে। লভিভ আঞ্চলিক প্রশাসনের প্রধান ম্যাক্সিম কোজিটস্কি এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, রাশিয়া আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কেন্দ্রে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ডের সীমান্ত থেকে ইউক্রেনের ভেতরে মাত্র ছয় মাইল দূরে ইয়াভোরিভ জেলায় ওই সামরিক ঘাঁটিটি অবস্থিত। হামলার পর এলাকাটি থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি উঠতে দেখা গেছে। প্রায় সাত লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত শহর লভিভ। হামলার ঘটনায় অন্তত ৩৫ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহত হয়েছেন। রুশ আগ্রাসন শুরুর পর এই শহর থেকে অনেক মানুষ পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। তা ছাড়া রুশ হামলার মুখে ইউক্রেন ত্যাগকারী লোকজনের জন্য লভিভ শহরটি একটি ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। পাশাপাশি এই শহর হয়েই ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমাদের পাঠানো মানবিক ও সামরিক সহায়তা আসছে।

    কিয়েভের কাছাকাছি রুশ বাহিনী : ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ১৮তম দিনে রাজধানী কিয়েভের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। কিয়েভের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে তারা।

    কিয়েভ দখল করতে চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য তারা এমন অবস্থান নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রোববারও কিয়েভের উপকণ্ঠে দুপক্ষের মধ্যে ব্যাপক লড়াই চলছিল। ভাসিলকিভ শহরের কাছে রাশিয়ার রকেট হামলায় ইউক্রেনের একটি বিমান ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোলাবারুদ মজুত করে রাখার একটি স্থাপনায় (ডিপো) রুশ হামলা হয়েছে। উপগ্রহ থেকে তোলা ছবিতে রাজধানী কিয়েভ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তরের শহর মশচুনের বাড়িঘর গোলার আগুনে জ্বলতে দেখা গেছে। মারিওপোলসহ কয়েকটি শহরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকে গোলার আঘাতে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি ও ভিডিওতে এসব শহরে মানুষের হাহাকার দেখা গেছে।

    ইউক্রেনের জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগ বলছে, লুহানস্ক অঞ্চলের সেভেরোদনেৎস্ক ও রুবিজন শহরে রাশিয়ার গোলায় কয়েক ডজন আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহর দুটিতে গোলাবর্ষণে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। জাতীয় জরুরি সেবা বিভাগের তথ্যমতে, রুশ সেনারা শনিবার রাতভর গোলাবর্ষণ করেছে। এতে শহর দুটির প্রায় ৬০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়ি ও আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

    ইউক্রেনের প্রায় প্রতিটি শহরে বিমান হামলার সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। বিমান হামলার সতর্ক সংকেতের পর পশ্চিম ইউক্রেনের লভিভ ও পোলটাভা শহরের বাসিন্দাদের তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বলা হয়।

    LEAVE A REPLY