বিনা উসকানিতে প্রতিবেশীর ওপর আগ্রাসন রাশিয়ার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা নাকচ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন।

তিনি বলেছেন, বিশ্বযুদ্ধ যাতে না হয় সে ব্যাপারে ন্যাটো খুবই সতর্ক। এটা বিনা উসকানিতে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবৈধ আগ্রাসন যা জাতিসংঘ সনদের সম্পূর্ণ লংঘন। ফলে বেসামরিক মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। রুশ বাহিনী হাসপাতাল ও স্কুলে বোমা নিক্ষেপ করে নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছে। রীতিমতো গণহত্যা। আমরা তাই এই আগ্রাসনের নিন্দা করেছি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার যুগান্তরকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বারিধারায় নিজ বাসভবনে দেয়া প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি, কোভিড ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভৃতি বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন।

রবার্ট ডিকসন বলেছেন, প্রত্যেক দেশেরই টিকে থাকার অধিকার রয়েছে। যুদ্ধের ফলে গোটা বিশ্বে বিপর্যস্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্য সংকট বাড়ছে। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোটা বিশ্বের উচিত রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। এটা ১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ আগ্রাসন। রাশিয়াকে এ অবৈধ যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।

যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে ডিকসন বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আনা প্রস্তাব সমর্থন করবে বলে আশা করেছিলাম। নৈতিক দিক দিয়ে প্রস্তাবটি ছিল খুবই শক্তিশালী। বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় অবদান রাখে। আশা ছিল, বাংলাদেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে। আমি বুঝতে পারি, বাংলাদেশ কেন সেটা করেনি। আশা করি, ভবিষ্যতে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বাংলাদেশ নৈতিক অবস্থানের পক্ষে সমর্থন জানাবে। আমি নিশ্চিত, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার অবৈধ আগ্রাসনের নিন্দা জানানোর জন্য বাংলাদেশের সামনে আরও অনেক সুযোগ আসবে। পরে বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবে ১৪১টি দেশ রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র চারটি দেশ। রাশিয়া খুবই বিচ্ছিন্ন। রাশিয়ার কোনো বন্ধু নেই। আমি বুঝতে পারি, কিছু দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। বেশিরভাগ দেশ নিন্দা জানিয়েছে। বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারের মৃত্যুতে আমি শোক প্রকাশ করেছি। এটা একটা ট্র্যাজিক ঘটনা। এটা থেকে স্পষ্ট যে, যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতি কী হতে পারে। আমি পরিবারের প্রতি সান্ত্বনা জানিয়েছি।

বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তাদের ভূমিকা কি হবে জানতে চাইলে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, নির্বাচন করাটা বাংলাদেশের দায়িত্ব। বাংলাদেশের নির্বাচন করার সামর্থ্য আছে। তবে বাংলাদেশের বন্ধু হিসাবে এটা আমরা আগেও বলেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি কার্যকর ও উষ্ণতার সম্পর্ক আমরা রাখতে চাই। বাংলাদেশ কার্যকর গণতন্ত্রের দেশ। তবে গণতন্ত্রের মৌলিক ও প্রথম পরীক্ষা হলো বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। আমরা আগামী নির্বাচন আগ্রহ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করব। নির্বাচন কতটা বিশ্বাসযোগ্য হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের কোনো সংস্থার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অবশ্যই পরিহার করা উচিত। বাংলাদেশের চমৎকার সংবিধান রয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। পাশাপাশি, মানবাধিকার লংঘনের বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদনও রয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়।

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো কার্যকর গণতন্ত্রের দেশে মিডিয়ার অনুসন্ধান করার অধিকার রয়েছে। মিডিয়ার ওপর যে কোনো চাপ উদ্বেগের বিষয়। আমরা বিভিন্ন দূতাবাসের প্রধান এ উদ্বেগের বিষয়ে আলোচনা করেছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নিয়ে যেসব উদ্বেগ দেখা দিয়েছে; জাতিসংঘ সেগুলোর সমাধানের চেষ্টা করছে। এটা খুবই সহায়ক হবে বলে মনে করি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক বিশেষ এবং অত্যন্ত গভীর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের সময়ে এ দেশের অভ্যুদ্বয়ের পক্ষে লন্ডনে বড় সমাবেশ হয়েছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশে ফেরার সময়ে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি ব্রিটিশ রাজকীয় এয়ারফোর্সের বিমানে দেশে ফিরেন। বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা গড়ে উঠেছে। আমাদের দেশে খুব শক্তিশালী ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায় রয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। তারা ব্রিটিশ সমাজের শক্তিশালী অংশ। বাংলাদেশ ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটাবে। এমন বাস্তব অবস্থায় আমরা উন্নয়ন সহায়তা থেকে সম্পর্ককে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি এবং অবশ্যই ক্রিকেট অঙ্গনে আমাদের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে; সেই সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।

আমি আগামী ৫০ বছরে আমাদের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলে আশাবাদী। আশা করি, আমাদের মিলিত পথচলার মাধ্যমে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশ সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হবে।

বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রতি আলোকপাত করে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, এটা একটা অসাধারণ সফলতার গল্প। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে যুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল, তারপর প্রলয়ংকরী বন্যায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের জনগণ গত ৫০ বছরে সেই কঠিন অবস্থা থেকে শুরু করে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উত্তরণ ঘটাবে।

এটা বিশ্বের যে কোনো দেশের জন্যে উদাহরণ। বাংলাদেশ মৃত্যুহার কমিয়েছে, মাতৃমৃত্যু হার কমিয়েছে, শিক্ষার উন্নয়ন ঘটিয়েছে, টিকা দেয়ার হারে উন্নয়ন ঘটিয়েছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সূচক। বাংলাদেশ তাই বিশ্বের কাছে একটা দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, দুই বছরের বেশি সময় আগে ব্রেক্সিট সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সেই হস্তান্তর সম্পন্ন করেছি এক বছর আগে। ইইউ বাজারে বাংলাদেশ যে সুবিধা পায়, যুক্তরাজ্যের বাজারেও আমরা একই সুবিধা দিচ্ছি।

এ সুবিধা বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের দেশের থেকে উত্তরণের পরও তিন বছর পর্যন্ত বহাল থাকবে। ফলে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল থাকবে। আগামী ৭ বছর বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো আগের মতোই আমাদের বাজারে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের সামনে মূল বিষয় হলো দেশটি কীভাবে বিকশিত হতে পারে। বেসরকারি বিনিয়োগ এখানে মূল চালিকা শক্তি হতে পারে। কোনো অর্থনীতির উন্নতির জন্য বেসরকারি খাত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে যাতে তাদের কর্মকাণ্ড দেখে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা আস্থাশীল হয়। আমরা আইএফসি তথা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছি যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় ও প্রতিযোগী হয়ে ওঠে। ডুয়িং বিজনেস র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮।

এ রকম আরও অনেক কিছু রয়েছে যেগুলোর প্রতি নজর দেয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ বিডা গত বছর যুক্তরাজ্যে রোডশো করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য সফর করেছেন।

যুক্তরাজ্যে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পুঁজিবাজার রয়েছে। এই পুঁজিবাজারের ব্যাপারে বাংলাদেশের বিপুল আগ্রহ রয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়ন ঘটানোর কাজ অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি গত দুই দশকে ছয় থেকে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এটা খুবই উল্লেখ করার মতো ঘটনা। এই অগ্রগতিকে টিকিয়ে রাখতে হলে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশে আমরা ইতোমধ্যে অনেক বড় বিনিয়োগকারী। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বিনিয়োগকারী। এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ইউনিলিভার প্রভৃতি বড় বড় ব্রিটিশ কোম্পানি এদেশে রয়েছে। ব্রিটিশ হাইকমিশনার হিসাবে আমি নতুন নতুন কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহ দেই। যুক্তরাজ্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কোম্পানি বাংলাদেশের বাজার যাচাই করে দেখছে। এখন কিছু কিছু ইস্যুর নিষ্পত্তি করতে হবে। ফলে বিনিয়োগকারীরা এদেশে নতুন করে আসবে।

বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কতিপয় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে ডিকসন বলেন, বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে আমলাতন্ত্রের দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় না পড়ে যায় সেটা চান। তারা বাণিজ্যিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে বাণিজ্যিক সময়সীমা বেঁধে দিতে চান। তারা সৎ লাভ নিতে চান। কোনো ইস্যু সুষ্ঠুভাবে সুরাহা করার জন্য আইনি কাঠামো থাকা দরকার। এসব কিছুতে উন্নয়ন দরকার। এসব কিছু ডুয়িং বিজনেসের জন্য প্রয়োজন।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রসঙ্গে বাংলাদেশে তহবিল বৃদ্ধির আভাস দেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমরা বাড়াব। গ্লাসগোতে কোপ-২৬ চলাকালে যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ জলবায়ু অংশীদারির আওতায় আগামী ৬ বছরের জন্য ১২০ মিলিয়ন পাউন্ড তহবিল ঘোষণা করেছি। এগুলো অনেকগুলো ক্ষেত্রে কাজে লাগবে। ক্লিন এনার্জিতে রূপান্তর, অভিযোজন অফিস স্থাপন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সক্রিয় কর্মসূচি রয়েছে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। আমরা অব্যাহতভাবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইস্যুটি উত্থাপন করে যাচ্ছি। মিয়ানমারকে হেগের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের মুখোমুখি করাকে স্বাগত জানাই। আমরা চাই রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফিরে যাক।

রোহিঙ্গাদের নিজের বাড়িঘরে ফিরে গিয়েই তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করবে। কিন্তু বর্তমানে মিয়ানমারের অবস্থা স্পষ্টত সেখানে ফিরে যাওয়ার অনুকূল নয়। আমরা বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের সঙ্গে ইস্যুটি নিয়ে কাজ করছি। সবাই একটা কঠিন অবস্থার মধ্যে বাস করছে। রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মিয়ানমারের ভাষায় শিক্ষা দিতে হবে। এর ফলে তারা মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহায়তার ওপর চাপের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। তিনি বলেন, এই যুদ্ধের ফলে সর্বত্র মানবিক সহায়তার তহবিলের ওপর চাপের সৃষ্টি করেছে। সিরিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তানে এরিমধ্যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেন সংকট সম্পূর্ণভাবে রুশ আগ্রাসনের ফল। এটা অবশ্যই তহবিলের ওপর চাপের সৃষ্টি করবে।

ব্রিটিশ ভিসার সিদ্ধান্ত ঢাকায় স্থানান্তরের সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে রবার্ট ডিকসন বলেন, হ্যাঁ, ব্রিটিশ ভিসার প্রসেস দিল্লিতে হয়। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা এ প্রসেস করেন। ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের ঢাকায় কিংবা দিল্লি বসে ভিসা প্রসেস করাতে কোনো পার্থক্য নেই। ভিসা প্রসেসিং অফিস দিল্লি রাখার অন্যতম কারণ হলো খরচ কমানো। এভাবে ভিসার খরচও কমে যাচ্ছে।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট ডিকসন বলেন, বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমাদের শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানির গন্তব্য যুক্তরাজ্য। আমরা আগামী ৭ বছরের জন্য বাংলাদেশি পণ্যের যুক্তরাজ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার বিষয় আলোচনা করছি। সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রপ্তানি তৈরি পোশাক খাতে হচ্ছে। বাণিজ্য খুব ভালো চলছে। হাইটেক শিল্পের ব্যাপারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের শিক্ষা, আর্থিক সেবা খাত, স্বাস্থ্যসেবা প্রভৃতি খাতে কাজ করা সম্ভব।

এক ডজন ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বিবেচনাধীন আছে। ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অংশীদারিত্ব এবং বাংলাদেশে ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহী। মালয়েশিয়া, শ্রীলংকাসহ এই অঞ্চলের অনেক দেশে এসব ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় একইভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশি তরুণ সম্প্রদায় ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা লাভে সমর্থ হবে। টেকসই প্রবৃদ্ধির মূলমন্ত্র হলো গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা। ফলে ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এদেশে এলে বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে উপকৃত হবে।

LEAVE A REPLY