২২ দিন আমি ‘মুজিব‘ হয়েই ছিলাম

ভারতে দিব্য জ্যোতি

“আমার জীবনে ২২ দিন অবিস্মরণীয় দিন। এই ২২টা দিনে যা পেয়েছি হয়তো আমি আর তা কখনোই পাব না। সেই ঘুম থেকে ৫টায় ওঠা, সাড়ে ৫টার মধ্যে রেডি হয়ে হোটেলের সামনে দাঁড়ানো, ৫টা ৩৫-এ গাড়ি এসে আমাদের নিয়ে যেত। পৌনে ৬টায় পৌঁছে যেতাম শুটিং স্পটে।

  ৬টায় ক্যামেরার সামনে ডাক, ‘মুজিব ইধার আও। ‘  

ক্যামেরার সামনে চলে যেতাম। এই ২২ দিন আমার নাম হয়ে যায় মুজিব, যেন আমি আমার নিজের নামটাও ভুলে গিয়েছিলাম। কেউ আমাকে মুজিব ছাড়া সম্বোধনই করত না। হিন্দি ভাষায় প্রডাকশনের মানুষরা যেমন মুজিব বলে আমাকে ডাকত, তেমনই বাংলাদেশি সহশিল্পী, সহকর্মীরাও আমাকে মুজিব বলেই ডাকত, তাই আমি যেন ছোটবেলার শেখ মুজিব হয়ে গিয়েছিলাম। “

বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে কিশোরবেলার শেখ মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেন দিব্য জ্যোতি। মুম্বাইয়ে এই ছবির শুটিং হয়েছে। সেখানের অভিজ্ঞতাই এভাবে জানালেন দিব্য।   জ্যোতি শাহনাজ খুশি ও বৃন্দাবন দাসের ছেলে দিব্য  জ্যোতি। পড়ছেন ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বঙ্গবন্ধু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ারের সময় তার কণ্ঠে এমন একটা ব্যাপার খেলা করছিল, যেটা বর্ণনায় প্রকাশ করা সম্ভব না। হয়তো ফেলে আসা শুটিংয়ের সেই দিনগুলোতেই ফিরে গিয়েছিলেন, আবার ঢুকে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্বীয় সত্তায়।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার গল্পটাও সহজ ছিল না দিব্যর। বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে কিশোরবেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ঢাকায় দুইবার অডিশনে অংশ নেন, পরে ছবির পরিচালক শ্যাম বেনেগল অনলাইনে চূড়ান্ত অডিশন নিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করেন। সে গল্প বলতে গিয়ে দিব্য বলেন, “প্রথমবার বিটিভিতে অডিশন দিতে হলো আমার। অনেকেই অডিশন দিচ্ছিল, আমি যে নির্বাচিত এতটা ভাবিনি। তারপর এফডিসিতে অডিশন নেওয়া হলো। পরে ফাইনালি শ্যাম বেনেগল সাহেব অনলাইনে আমার অডিশন নিলেন। আমি খুব সাবলীলভাবে অডিশন দিলাম। যখন বলা হলো, ‘তুমিই এটা করবে…’, তখন আমি ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলাম না। “

দিব্য বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনে এসেছি। তিনি যে একজন বিশাল মাপের নেতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের হৃদয়েও তিনি ছোটবেলা থেকে বিশাল হয়েই ছিলেন। মায়ের কাছে গল্প শুনেছি, বাবার কাছে শুনেছি। এমন একজন মানুষের চরিত্রে অভিনয় করব এটা বিশ্বাস করা কঠিন। তার পরেও যখন সেটা বাস্তব হতেই যাচ্ছে, পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করলাম। বইপত্র জোগাড় করে আত্মস্থ করার চেষ্টা করলাম ছোটবেলার বঙ্গবন্ধুকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানার সঙ্গে শুটিংয়ে যাওয়ার পূর্বে অনেক গল্প হয়েছিল, সেখান থেকেই একটা ধারণা পেয়েছিলাম কিশোর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। মুম্বাইয়ে এসবই আমাকে সহায়তা করেছে। ’

মুম্বাইয়ে শহরতলির এক প্রান্তে পাহাড়, লেক আর গাছগাছালিতে ঘেরা দাদাসাহেব ফালকে ‘চিত্রনগরী’ বা ফিল্মি সিটি – সেখানেই ‘বঙ্গবন্ধু’ বায়োপিকের শুটিং হয়েছে। অ্যারে পার্ক নামে একটা বিস্তীর্ণ সবুজ পাহাড়ি অরণ্যের কোলে বিছানো এই ফিল্ম সিটি, আপাতত তারই অন্তত ছয়টি লোকেশনে করা হয় বঙ্গবন্ধুর সেট। বঙ্গবন্ধুর পূর্ণাঙ্গ বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। আজ ১৭ মার্চ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। সেটা পিছিয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY