রবিবার ক্রেতা বিক্রেতা সম্মিলনে প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। ছবি: ভোরের কাগজ
সহজ শর্তে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারের কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে আরো ঋণ প্রয়োজন। এজন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের অনুকূলে নিয়মিত অর্থ বরাদ্দ করা উচিত বলে জানিয়েছেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৬ষ্ঠ বারের মতো ক্রেতা বিক্রেতা সম্মিলনে রবিবার (২০ মার্চ ) প্রধান অতিথি হিসেবে শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এসব কথা বলেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মিলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী সাখাওয়াত হোসেন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচালক পর্ষদ সদস্য হাসিনা নেওয়াজ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ও নারী-উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যগুলোকে দেশের প্রথম সারির ক্রেতাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেই নিয়মিত এ ধরনের ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন আয়োজন করে আসছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন বলেন, পুঁজি ও পণ্যের বাজার সংযোগের অভাবে পিছিয়ে পড়েন দেশের এসএমই উদ্যোক্তারা। সেই সাথে তাদের পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করাও বড়ো চ্যালেঞ্জ। এসএমই উদ্যোক্তাদের এসব সংকট সমাধানে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে জানানো হয়, দেশে প্রায় ১০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং প্রায় ৬৮ লাখ কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে; যার ৭ দশমিক ২১ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। নারীর জন্য সহায়ক কর্মপরিবেশ তৈরি ও নানাবিধ প্রণোদনার ফলে দেশে নারী-উদ্যোক্তার সংখ্যা প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে। পণ্যের বাজার সংযোগ বা বাজারজাতকরণ নারী-উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম প্রধান একটি বাধা। ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ৩৭ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা পুঁজি সংকটের কথা উল্লেখ করলেও ২০ শতাংশ নারী-উদ্যোক্তা পণ্যের বাজারজাতকরণকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এ প্রেক্ষাপটে নতুন নারী-উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ তৈরির মাধ্যমে পণ্যের বাজারজাতকরণ সমস্যা সমাধানের জন্য এসএমই ফাউন্ডেশন ৬ষ্ঠ বারের মতো ‘ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬০জন সম্ভাবনাময় নারী-উদ্যোক্তা অংশ নেন। অংশগ্রহণকারী নারী-উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত বুটিক পণ্য, পাটজাতপণ্য, চামড়াজাত পণ্য, হস্তশিল্প, জুয়েলারি, ইত্যাদি বাণিজ্যিক ক্রেতাদের জন্য প্রদর্শন করবেন। অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ক্রেতা হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন মার্কেটপ্লেস-এর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী নারী-উদ্যোক্তাদের পণ্যের গুণগত মান, ডিজাইন, রংয়ের ব্যবহার, পাইকারি মূল্য এবং উৎপাদন সক্ষমতা যাচাইয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ক্রেতাগণ সাপ্লাইয়ার নির্বাচন করতে পারবেন। পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা, পণ্যের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিজাইন ব্যবহার এবং পাইকারি মূল্য নির্ধারণ কৌশল বিষয়ে অংশগ্রহণকারী নারী-উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশন আশা করছে, ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন অনুষ্ঠানটি একদিকে নারী-উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ক্রেতা বা খুচরা বিক্রেতাদের পণ্যের সরবরাহ উৎস বা যোগানদাতা খুঁজে পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত গত পাঁচটি ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলনে প্রায় ২০০জন নারী-উদ্যোক্তা পণ্য প্রদর্শন করেন এবং প্রায় ১৬০জন নারী-উদ্যোক্তা নিয়মিত দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য সরবরাহ করছেন। মেলায় ‘এসএমই পণ্যের মানোন্নয়ন এবং বাজার সংযোগ’ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।