বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের আনন্দে পতাকা হাতে উল্লাসে মেতে ওঠে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা ।
বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের সর্বশেষ মুহূর্তের বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই লাল-সবুজের পতাকা হাতে উল্লাসে মেতে ওঠে গোটা স্টেডিয়াম। চারপাশের সাউন্ড বক্সে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ খেলোয়াড়দের গায়ে লাল-সবুজের জার্সি, হাতে সেই চেতনার রংয়ের পতাকা। গ্যালারিতে দর্শক, মাঠের পাশে কর্মকর্তারা প্রত্যেকে নিজস্ব আঙ্গিকে উদযাপনে মেতে ওঠে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের আনন্দে।
পল্টনের শহীদ নূর হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টের ফাইনালে কেনিয়াকে দুটি লোনাসহ ৩৪-৩১ পয়েন্টে হারিয়ে শিরোপা নিজেদের কাছেই রেখে দিয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। শারীরিক শক্তি ও উচ্চতায় এগিয়ে থাকায় কেনিয়ার খেলোয়াড়দের আটকাতে গিয়ে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন তুহিন তরফদার-আরদুজ্জামান মুন্সিরা। পল্টনের স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে স্বাগতিকদের টেকনিক ও কেনিয়ার শক্তির। প্রতিপক্ষের কোর্ট থেকে পয়েন্ট ছিনিয়ে আনতে গিয়ে স্বীয় কোর্টে ফিরে আসতে পারেননি রবিউল, জাকির ও ফেরদৌসরা। কেনিয়ার অপ্রতিরোধ্য ডিফেন্সের জন্যই তারা ব্যর্থ হয়েছে।
আবার তাদেরকে নিজেদের কোর্টেও আটকে রাখতে পারেনি। এজন্য কোচ সাজুরামের নতুন কৌশলও আঁকতে হয়েছে ম্যাচ চলাকালীন। প্রতিপক্ষকে আটকানোর ঝুঁকিতে না গিয়ে পয়েন্ট আনায় মনোযোগ দেয় স্বাগতিকরা। তাতে সফলও হয়। শুরুতে বেশ কিছু সময় ধরে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রথমার্ধের শেষ দিকে গিয়ে ছন্দে ফেরে। তুহিন তরফদার লিড এনে দেন। ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষে ১৭-১৪ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এরপর প্রথমবারের মতো কেনিয়ার সেরা রেইডার ভিক্টরকে আটকে ফেলা বাংলাদেশ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। পয়েন্ট ছিনিয়ে এনে কেনিয়ার খেলোয়াড়দের আউট করতে থাকেন রাজিব-জাকিররা। কেনিয়াকে অল আউট করে এই অর্ধে প্রথম লোন অর্জন করে বাংলাদেশ। বিরতির পর শুরুতে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে আটকাতে গিয়ে পয়েন্ট উপহার দেন ফেরদৌস।
এক পর্যায়ে রাজিব ও সবুজ আউট হলে লিড নেয়া কেনিয়ার পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়ায় ১৮-১৭। তিনজনে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের অলআউটের শঙ্কা জাগে। একটু পরই কেনিয়ার ভিক্টরকে আউট করলে সমতা আনে লাল-সবুজের দলটি। এরপর মুনিরুলের ভুলে আবার লিড নেয় কেনিয়া। পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান রাজিব আহমেদ। একাই কেনিয়ার দুই প্লেয়ারকে আউট করে মূল্যবান দুই পয়েন্ট এনে দিলে জেগে ওঠে গ্যালারি। এই টার্নিং পয়েন্টে ফিরে এসে দারুণ খেলতে থাকা স্বাগতিকরা ব্যবধান নিয়ে যায় কেনিয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে। একে একে কেনিয়ার ওদিয়াম্বো, নামাবকে আউট করলে পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়ায় ৩০-২৩। অনেকেই ধরে নিয়েছিল বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত। তবে আবারো সেই একই ভুলের কারণে ব্যবধান কমিয়ে ৩২-৩১ নিয়ে আসে কেনিয়া।
ম্যাচের শেষ মিনিটে কেনিয়ার নাম্বার ওয়ান ভিক্টর ভুল করে বসেন। এই ভুলই কেনিয়ার কাল হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিপক্ষের এক ভুলে দুই পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশ শিরোপা জয়ের আনন্দে মেতে উঠে বাঁশি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। প্রথম বঙ্গবন্ধু কাবাডি টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। গত আসরের ফাইনালেও চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ ছিল শক্তিশালী কেনিয়া। এক কেনিয়াকেই পরপর দুই আসরে হারিয়ে টানা শিরোপা ধরে রাখল স্বাগতিক বাংলাদেশ।
এর আগে ইরাককে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। একই স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে বাংলাদেশ ৫৫-৩৬ পয়েন্টে হারায় ইরাককে। এর আগে প্রথম সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে কেনিয়া। কাবাডিতে ইরাকের পথচলা খুব বেশি দিন হয়নি। মাত্র ছয় বছর। অল্প সময়ের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি নিজেদের নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। শেষ চারে বাংলাদেশের বিপক্ষে লড়াকু মনোভাব দেখায় তারা। ঐতিহ্য ও শক্তির বিচারে যোজন যোজন এগিয়ে থাকা বাংলাদেশকে শুরুতে ভালো চ্যালেঞ্জ জানায় তারা। তবে কৌশলে এগিয়ে থাকা স্বাগতিক বাংলাদেশের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি ইরাক।
প্রথমার্ধে ইরাকের হাসান ফায়েজ-মোহাম্মদ হাদিদের দুর্দান্ত রেইডে কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল তুহিন তরফদার-আরদুজ্জামান মুন্সিরা। বাংলাদেশের চারজনকে আউট করে ১০-১০ পয়েন্টে সমতা আনেন ফায়েজ। রাজিব আহমেদ-জাকিররা পয়েন্ট ছিনিয়ে আনার সঙ্গে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে আটকে পয়েন্টের ব্যবধান বাড়াতে থাকেন। প্রথম ২০ মিনিটেই ইরাককে দুবার অলআউট করা স্বাগতিকরা প্রথমার্ধেই ৩০-১৭ পয়েন্টে এগিয়ে যায়। ইরাকের দুই তারকার দুর্বল জায়গাগুলো দ্রুতই চিহ্নিত করে ধীরে ধীরে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় তারা। এই কারণে প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে সহজেই পয়েন্ট তুলে নিয়েছিল স্বাগতিকরা।
শেষ পর্যন্ত তিনটি লোনাসহ ইরাককে ৫৫-৩৬ পয়েন্টে হারিয়ে শিরোপামঞ্চে লাল-সবুজের দলটি। দ্বিতীয়ার্ধে জয় নিশ্চিত জেনে নতুন কিছু খেলোয়াড়কেও সুযোগ দেন কোচ সাজুরাম গায়েত। কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়ে দলকে ফাইনালে তুলে নিতে তারাও বেশ ভালো অবদান রাখেন। তবে শেষ দিকে কিছুটা ছন্দপতন হয় লাল-সবুজের দলটির। অলআউট হওয়ার শঙ্কা জাগলেও তুহিন একাই পয়েন্ট ছিনিয়ে আনেন। ম্যাচের শেষ মিনিটে চার পয়েন্ট আনলে দ্বিতীয়বারের মতো বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তর্জাতিক কাবাডির ফাইনালে ফাইনালে ওঠার আনন্দে মেতে উঠেছিল পুরো গ্যালারি। অন্যদিকে টুর্নামেন্টের প্রথম সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল কেনিয়া। প্রথমার্ধে কেনিয়া ২টি লোনাসহ ২৬-১২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩ লোনাসহ ৪৯-২৯ পয়েন্টে জয় পেয়েছে কেনিয়া।এসএইচ