ধোঁয়াবিহীন তামাকে দেশে দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে

বর্তমানে দেশে তামাক ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ৭৮ লাখ। এর মধ্যে দুই কোটি ২০ লাখই ব্যবহার করে ধোঁয়াবিহীন তামাক। শতাংশের হিসাবে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করছেন মোট তামাক ব্যবহারকারীদের ৫৮ ভাগ। এ তথ্য গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস)-এর।

কিন্তু জনসংখ্যার বড় অংশের ক্ষতির কারণ হয়েও এখনো নজরের বাইরে রয়ে গেছে এই ধোঁয়াবিহীন তামাক। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কোনো ধারাই মেনে চলছে না এর উৎপাদনকারীরা। ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে এর বাজারজাত ও ব্যবহার।

বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন (২০০৫)-এর সংজ্ঞায়- চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনী, সাদাপাতা, সিগার এবং হুক্কা বা পাইপের ব্যবহার্য মিশ্রণকেও তামাকজাত দ্রব্য বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বাংলাদেশে ঠিক কি পরিমাণ কারখানায়, কি পরিমাণ ধোঁয়াবিহীন তামাক উৎপাদিত হয়, তার সঠিক কোনো সরকারি হিসাব নেই। তাই এই খাতটিকে পর্যবেক্ষণ বা উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগও নিতে পারছে না সরকার।

এ ছাড়া উচ্চহারে করারোপ করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানের সঠিক হিসাব না থাকায় কর আদায় হচ্ছে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা বলেন, ‘বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন- সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের জন্য প্রযোজ্য। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোর মধ্যে এখন সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের মোড়কের ভিন্নতা অনেক বেশি এবং মোড়কে সঠিক নাম ঠিকানা না থাকায় জর্দা-গুল কম্পানিগুলো আইনের চোখে সহজেই ফাঁকি দিচ্ছে। গ্যাটস ২০১৭-এর তথ্যমতে, ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার হলো ২০ শতাংশ ও ধোঁয়াযুক্ত তামাকের ব্যবহার হলো ১৮ শতাংশ। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিক্রিও বেশি হয়। অথচ বিড়ি-সিগারেটের তুলনায় জর্দ্দা গুল কম্পানিগুলো অনেক অনেক গুণ কম ট্যাক্স দিচ্ছে। ‘

তিনি বলেন, ‘একটি আলোচনা সভায় এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, এনবিআরের কাছে মাত্র ২০টি ধোঁয়াবিহীন তামাক কম্পানি নিবন্ধিত আছে। শুধু এরাই সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে। টিসিআরসির কাছে ৪৩০টি ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের তালিকা ছিল, যা এনবিআরের কাছে পাঠানো হয়। টিসিআরসি ২০১৬ সাল থেকে ৬৪ জেলার ৬৪ উপজেলার ২৬৫টি বাজার থেকে  প্রায় ২০ হাজারের ওপরে তামাকপণ্যের তথ্য সংগ্রহ করে এবং বেশ কয়েকটি গবেষণা পরিচালনা করে। এর মধ্যে ৭৮৮টি ব্র্যান্ডের ধোঁয়াবিহীন তামাক ছিল। এর মধ্যে ৭৩০টি জর্দ্দার ব্র্যান্ড, ৫৮টা গুলের ব্র্যান্ড এবং ৩৯০টির মতো জর্দ্দা কম্পানি পাওয়া যায়। অথচ, ট্যাক্স দিচ্ছে মাত্র ২০টি কম্পানি। ‘

ফারহানা বলেন, ‘ধোঁয়াবিহীন তামাক সবচেয়ে বেশি আইন ও কর ফাঁকি দেয়। এ জন্য আমরা তামাকপণ্যের স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছি। এতে কৌটার মাপ, সর্বনিম্ন ওজন, মোড়কের ডিজাইন, বারকোড সিস্টেমসহ আধুনিক কর আদায় পদ্ধতি, ছবির মাপ, উৎপাদনের তারিখ, উপাদান, সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য ইত্যাদি সব স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার প্রস্তাব রয়েছে। ‘

ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ে শঙ্কার কথা জানান বারডেম হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী । তিনি বলেন, ‘জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা খাওয়ার ফলে মানুষের মুখে এক ধরনের ঘা হয়, যা পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপ নেয়। এ ছাড়া, এসব তামাক সরাসরি রক্তে প্রবেশ করায় নারীদের হার্ট অ্যাটাক, ফুসফুসে সংক্রমণের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভপাত, নবজাতকের কম ওজন, মায়ের মৃত্যুসহ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মও হতে পারে। ‘

LEAVE A REPLY