জয়ের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে লড়াই করার পুঁজি বাংলাদেশের

বাউন্ডারি হাঁকান মাহমুদুল হাসান জয়। ফাইল ছবি

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্টে ডারবানে তরুণ পেসার খালেদ আহমেদের চার উইকেট নেওয়ার সুবাদে প্রেটিয়াদের প্রথম ইনিংস থেমে যায় ৩৬৭ রানে। প্রোটিয়াদের চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে গিয়ে গতকাল মাত্র ৯৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় টাইগাররা। আগের দিন ১৪১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদুল হাসান জয় আজ দলের চরম বিপদে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যান। অভিজ্ঞ ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে শনিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেষ্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন এ তরুণ টাইগার ব্যাটার। ২৬৯ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলতে জয় দশটি চার এবং একটি ছক্কা হাঁকান। জয়ের এ সেঞ্চুরির ফলে ডারবানে পাল্টা জবাব দিচ্ছে টাইগাররা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের সংগ্রহ ১০০.৩ ওভারে ২৪১ রান। এখনো ১২৬ রানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। জয় ১০০ রানে এবং মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৪ বলে ১৫ রান করে অপরাজিত রয়েছেন।

এর আগে গতকাল ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২৫ রানেই ওপেনার সাদমান ইসলাম সাজঘরে ফিরে গেলেও বাংলাদেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিপত্তিটা বাঁধে তৃতীয় সেশনে এসে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডানহাতি স্পিনার সাইমন হারমারের ঘূর্ণিতে ১৪ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার অধিনায়ক মুমিনুল শূন্য ও মুশফিকুর রহিম ৭ রানে ফিরে গেলেও তরুণ ব্যাটার জয় পরাস্ত হয়নি প্রোটিয়াদের স্পিনে। দ্বিতীয় দিনের একদম শেষভাগে তাসকিনকে নিয়ে মোকাবেলা করেছেন হারমার-মহারাজকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েই। এরপর তো শেষ ম্যাচে জয় পেয়ে টাইগাররা সিরিজ জয়ের ইতিহাসই গড়ে তোলে রীতিমতো। এবার ডারবানে প্রথম টেস্টে ডানহাতি ওপেনার জয়ের ওপর ভর করেই দারুণ কিছুর আশা করছে বাংলাদেশ। দেশের বাইরে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজেই বাংলাদেশ ইতিহাস গড়ে এসেছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো জয় পায় বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইতে সেই টেস্টেও দারুণ এক ইনিংস খেলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ছিলেন তরুণ ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়।

তরুণ এই টাইগার ওপেনারের অভিষেকটা ছিল মলিন। দেশের মাটিতেই হোম অফ ক্রিকেট মিরপুরে অভিষেক হয় জয়ের। গতবছর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে সাদমান ইসলামের সঙ্গে বাংলাদের ইনিংস শুরু করতে নেমইে তার টেস্ট যাত্রা শুরু। তবে প্রথম ইনিংসেই তাকে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। ৭ বলে ০ রান করে সাজিদ খানের বলে বাবর আজমের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছিলেন। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে হাসান আলীর বলে বোল্ড হয়ে মাত্র ৬ রান করেই ফিরে এসছিলেন। কিন্তু এরপর খেলা দুটি টেস্টেই নিজেকে চিনিয়েছেন ২১ বছর বয়সী মাহমুদুল হাসান জয়। বাংলাদেশ দল যখন ওপেনারের অভাবে ভুগছে তখনই জয় যেনো দলকে টেনে তোলার ভারটা নিয়েছে নিজের হাতে। এই বছরের শুরুটা করেছেন দারুণভাবে।

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মঙ্গানুইতে তাদেরই বিপক্ষে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন জয়। ৩২৮ রানের টাপ নিয়ে ইনিংস শুরু করতে যেয়ে টাইগাররা ৪৩ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে বসে। এরপর দারুণ ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিয়েছেন এই ওপেনার। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তকে নিয়ে গড়েছিলেন ১০৪ রানের জুটি। তিনি সাজঘরে ফিরছেন তখন স্কোরবোর্ডে টাইগারদের সংগ্রহ ৭০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৮৪। জয় নামের পাশে ৩৪.২১ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ৭ বাউন্ডারিতে ৭৮ রান। কিন্ত তার থেকেও বড় বিষয় নিউজিল্যান্ডের পেসারদের দারুণভাবে সামলে খেলে এসেছিলেন ২২৮ বল। এই ম্যাচেই ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতকও তুলে নেন নিজের তৃতীয় ইনিংসেই। এবাদতের বোলিং তোপে ইতিহাসগড়া সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পায় ৮ উইকেটে। তবে ব্যাটিংয়ে তরুণ জয়ের ৭৮ রানের ইনিংসও দলের জয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এরপর ডারবানে নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমে চালকের আসনে বসে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন টাইগারদের।

লাল বলের ক্রিকেটে জাতীয় দলের হয়ে নিজের শেষ দুই ম্যাচে দারুণ পারফর্ম করলেও সাদা বলের ক্রিকেটে জাতীয় দলের হয়ে এখনো অভিষেক হয়নি তরুণ জয়ের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শর্ট ফরম্যাটে অভিষেক না হলেও দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ বিপিএলের সবশেষ আসরে ভালো খেলেছেন জয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সর্বশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ১১ ম্যাচে ৯ ইনিংসে ১১৫.১৯ স্ট্রাইকরেটে ২৬.১১ গড়ে করেছেন ২৩৫ রান। সর্বোচ্চ ৬৫ রানের ইনিংস খেলেছেন একটি ম্যাচে। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে জয়ের নায়ক ছিলো একজন বোলার। তাসকিন আহমেদ ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশের এই ডানহাতি পেসার। যার ৮টি উইকেটই জয় পাওয়া দুটি ম্যাচেই।এসএইচ

LEAVE A REPLY